সাইবেরিয়ার গুহায় তুষারযুগের সিংহছানা ঘুমিয়ে

সাইবেরিয়ার গুহায় দিব্যি ঘুমিয়ে রয়েছে তুষার যুগের একটি সিংহছানা। ২৮ হাজার বছর আগের সিংহ শাবকের এখনও মমি অক্ষত রয়েছে। একথায় চমকে গেলেও এটাই সত্যি।

ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময় জানিয়েছে, সিংহছানাকে দেখলে মনে হবে যেন চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে। ছুঁলেই জেগে উঠবে! গায়ের সোনালি লোম কাদায় মাখামাখি। কিন্তু কোথাও পচনের চিহ্নটুকুও নেই। অথচ ওর বয়স ২৮ হাজার বছর!

তার নখ এখনও এতটাই তীক্ষ্ণ যে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে তা বিঁধে গেল গবেষকের আঙুলে। কিন্তু তাতে নজর দেওয়ার সময় নেই। ২০১৮ সালে সাইবেরিয়ার একটি গুহায় যখন সিংহ ছানাটির সন্ধান মেলে তখন অভিভূত বিজ্ঞানীরা। তুষার যুগের এমন অক্ষত মমি আর একটিও পায়নি তারা। তুষার যুগের সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত, গুহা সিংহের মমি। সম্প্রতি এর বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার বছর!

ভালোবেসে বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছে স্পার্টা। ২০১৭ সালে এই গুহাতেই মিলেছিল আরও একটি সিংহশাবকের সন্ধান। রাশিয়ার সেমুলেখ নদীর ধারে ওই গুহায় মাত্র ৪৯ ফুটের ব্যবধানে দু'টি গুহা।

সিংহের মমি পেয়ে প্রথমে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিল, এরা বোধহয় একই মায়ের সন্তান। কিন্তু রেডিয়ো কার্বন ডেটিং বুঝিয়ে দিয়েছে এদের বয়সের পার্থক্য প্রায় ১৫ হাজার বছর! ২০১৭ সালে পাওয়া বরিসের বয়স প্রায় ৪৩, ৪৪৮ বছর! তবে, বরিসের চেয়ে স্পার্টার মমি অনেক ভালো অবস্থায় পাওয়া গেছে। স্পার্টার দাঁত, নখ, চামড়া অক্ষত। সফট টিস্যু আর অঙ্গগুলো মমি হয়ে গেলেও এতটুকু পচেনি। এমনকি এক্কেবারে অক্ষত কাদায় মাখা লোমও!

সুইডেনের প্যালিওজেনেটিক্স সেন্টারের অধ্যাপক লাভ ডালেন জানান, স্পার্টাই সম্ভবত সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত তুষারযুগের প্রাণী। ওর দেহাংশ তো বটেই গোঁফও এক্কেবারে অটুট। বরিসের জীবাশ্মে কিছুটা পচন ধরেছিল। তবে তার অবস্থাও খুব খারাপ ছিল না।

বিজ্ঞানীরা বলছে, দু'টি সিংহশাবকের বয়েই ১-২ মাসের আশেপাশে। তবে, কীভাবে তারা মারা গিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। শরীরে কোথাও কোন ক্ষতচিহ্ন নেই। তাই কোন শিকারী প্রাণীর হাতে নিহতের সম্ভাবনা কম। ডালেন মনে করেন, এদের শরীর যেভাবে সংরক্ষিত হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বরফের স্তূপে চাপা পড়েছে এরা। সেক্ষেত্রে কাদাধসে মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো কাদাধসে ভেসে হিমবাহের খাঁজে আটকে গিয়েছিল। তাই দেহ একেবারেই অক্ষত!

তুষারযুগে সাইবেরিয়ার এই অংশে ঘুরে বেড়াতো ম্যামথ, তুন্দ্রা নেকড়ে, ভালুক, লোমশ গন্ডার, বাইসনরা। সেইসঙ্গে ছিল কেভ লায়ন বা গুহা সিংহরা। এখনকার আফ্রিকান সিংহদের থেকে আকারে সামান্য বড়। তবে, সাইবেরিয়ার প্রবল ঠান্ডায় তারা কীভাবে থাকতো তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনও একটা ধাঁধাঁ।

বিজ্ঞানীরা বলছে, গুহা সিংহের লোম আফ্রিকার সিংহদের মতো হলেও তুষারযুগের সিংহদের লোমের নীচে আরো একটা লোমের আস্তরণ বা আন্ডারকোট থাকতো। আর তাই সম্ভবত তাদের ঠান্ডা থেকে সুরক্ষিত রাখতো।

রাশিয়ার ওই অঞ্চলে বরফ গলার মরসুম শুরু হলেই দলে দলে বেরিয়ে পড়ে স্থানীয় অধিবাসীরা। তবে, ছুটি কাটাতে নয়। হিমবাহের খাঁজে বা বরফের মধ্যে জীবাশ্মের সন্ধানে। বিশেষ করে ম্যামথের দাঁত পেলে কথাই নেই! হাতির দাঁত থেকেও বেশি দামে বিক্রি হয় তা। এমন একটি টাস্ক হান্টারের দলে যোগ দিয়েছিলেন রুশ বিজ্ঞানী ভ্যালেরি প্লটনিকোভ।

ভ্যালেরি জানান, ওদের সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট গুহায় ঘুরেছি। প্রবল ঠান্ডা তার উপর যে কোন সময় ধস নামার বিপদ! কিন্তু তার মধ্যেও কাজ করে দু'টি সিংহ শাবক, একটি নেকড়ের মাথা আর ম্যামথের একটি গোটা পরিবারের মমি পাওয়া গেছে। এটা কী কম পাওয়া।

আপাতত স্পার্টা আর বরিসের লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়া চলছে। এরপর হবে ডিএনএ সিকোয়েন্সিং। গুহা সিংহের বিবর্তনের ইতিহাসে বরিস আর স্পার্টা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাবে বলে মনে করছে গবেষকরা।

 

এসএন

Recommended For You

Exit mobile version