চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানা এলাকায় নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার অপরাধে তার স্বামী রিদোয়ানুল হক ওরফে সোহেল রানা ওরফে হৃদয়কে (৩৭) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়।
বুধবার (১৭ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সিরাজাম মুনীরা এ রায় ঘোষণা করেন। এসময় দণ্ডপ্রাপ্ত রিদোয়ানুল হক আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার শানু আক্তার (২৪) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর এলাকার আবদুস ছাত্তারের মেয়ে। ২০১৪ সালে তার সঙ্গে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া এলাকার মোক্তার আহম্মদের ছেলে রিদোয়ানুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুজনে নগরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তারা চান্দগাঁও থানার পশ্চিম মোহরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি ভাড়া ঘরে থাকতেন।
২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে ওই গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে রিদোয়ান বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় ঝগড়া হতো। একপর্যায়ে ওই বছরের ১৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় রিদোয়ান তার স্ত্রীর বড় বোনের স্বামীকে ফোন করে বলেন, শানু গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন ছুটে এসে দেখে বাসার বাইরে তালা লাগানো। পরে পাশের বাসা থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুলে বাথরুমের লোহার ফ্রেমের সঙ্গে অর্ধঝুলন্ত অবস্থায় শানুর মরদেহ দেখতে পায়।
ঘটনায় পরদিন ১৬ অক্টোবর নিহতের ছোট ভাই মো. ইসকান্দর বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় রিদোয়ানকে একমাত্র আসামি করা হয়। পরবর্তী সময়ে রিদোয়ানকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেসময় রিদোয়ান পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে হত্যা করেছে মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চান্দগাঁও থানার এসআই জাহাঙ্গীর আলম শিকদার রিদোয়ানকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুলাই মামলাটিতে আসামি রিদোয়ানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন হয়।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট দীর্ঘতম বড়ু দিঘু বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় মামলাটিতে ১০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরপর আইনিপ্রক্রিয়া শেষে আজ (বুধবার) রায় ঘোষণা হয়। এতে দণ্ডবিধি ৩০২ ধারায় অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় একমাত্র আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। রায়ের পর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।