পাড়ার মোড়ের দোকানে গেছেন পুরি,সিঙারা আনতে। দোকানদার সেই খাবার মুড়িয়ে দিল খবরের কাগজের ঠোঙায়। কিন্ত এসব খাবার, ঝালমুড়ি, চানাচুর ভাজা খেতে যে খবরের কাগজের ঠোঙাটি ব্যবহার করা হয়—তা মানব শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে আমরা কজন জানি?
বাংলাদেশে কাগজের ঠোঙার ব্যবহার ব্যাপক। খবরের কাগজ পড়া হয়ে গেলে সেগুলো ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়।
আর এসব কাগজের বড় একটা অংশ পুনর্ব্যবহার করা হয় ঠোঙা বানিয়ে। অনেকেই ব্যবহৃত বই-খাতা, ডায়েরি বাসার বাইরে ফেলে দেয়। ময়লা-আবর্জনার মধ্যে ওসব বই-খাতা কুকুর-বিড়ালের ঘাঁটাঘাঁটি করে জীবানু ছড়ায়। এসব পরিত্যাক্ত বই খাতা পরে টোকাইদের হাত হয়ে চলে যায় ঠোঙা, প্যাকেট তৈরীর কারখানায়।
আর ঠোঙ্গা কিংবা প্যাকেটে তৈরি খাবার বিক্রি করা হয়। কাগজের ঠোঙা বা লেখা কাগজের নোংরা এবং জীবানু যুক্ত থাকে। এছাড়াও এসব কাগজে লেখা বা ছাপার কাজে ব্যবহৃত কালি খাবারের সঙ্গে মিশে যায়। সেই কালিমিশ্রিত খাবার মানব জীবনে ব্যাপক ক্ষতি করে।
কাগজে ছাপানোর কাজে যে কালি ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে থাকা নানা ধরনের বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান। এসব খাবারকে অস্বাস্থ্যকর ও বিষাক্ত করে তোলে। এই কালির কারনে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে! এমন তথ্য জানিয়েছে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) ।
সংস্থাটি বলছে, খবরের কাগজে ব্যবহার করা কালিতে থাকে একাধিক বায়োঅ্যাকটিভ পদার্থ। এসব পদার্থ খবরের কাগজে মুড়ে রাখা বা ঠোঙায় রাখা খাবারের সঙ্গে সহজেই মিশে যায়। এসব খাবার খেলে মানুষের শরীরের উপর বিষাক্ত প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের ঠোঙায় আনা কাঁচা খাবার এমনকি স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না করার পরও ঝুঁকি থাকে। শুধু তা-ই নয়, ঠোঙার বিপদের মাত্রা বোঝাতে বলা হচ্ছে, খবরের কাগজ রাসায়নিকভাবে রিসাইকেল করে তা দিয়ে প্রস্তুত কাগজ ও কার্ডবোর্ডের উপাদানেও বিপদের ঝুঁকি আছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খবরের কাগজ, ছাপা কাগজ ও লিখিত কাগজে করে ঝাল মুড়ি, ফুচকা-সমুচা, রোল-শিঙাড়া, পেঁয়াজু, জিলাপি, পরোটা ইত্যাদি খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব ঠোঙ্গা কিংবা প্যাকেটে খাবার বিক্রি নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় খাবারের বিশুদ্ধতা রক্ষা করা কঠিন। তারপর যদি লেখার কালি খাবারের সঙ্গে মানুষকে খেতে হয় তা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হযে উঠে। একারনে খবরের কাগজ বা ছাপা কালির লেখা কাগজের বিকল্প হিসাবে শালপাতা, কাঁঠালপাতা, কলাপাতা প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।