দেশের সেরা লিচু উৎপন্ন হয় দিনাজপুর জেলায়। এ জেলা লিচুর জন্যই বিখ্যাত। তবে লিচুর রাজ্যে এবার আমেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ আম। এবার জেলায় প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দিনাজপুর জেলার সদর, বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে আম। গেলো বছরের চেয়ে এবার গাছে ফল এসেছে অনেক বেশি। আম গাছগুলো যেন আমের ভারে নুয়ে পড়েছে। তীব্র গরমের পর বৃষ্টিতে সতেজ হয়ে উঠছে আম।
বিরল উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনছার আলীর বাগানে সবমিলিয়ে পাঁচ শতাধিক আম্রপালি জাতের আমের গাছ রয়েছে। আমের ভারে নুয়ে আছে প্রায় সব গাছ। আশাতীত ফলনে খুশি তিনি।
আনছার আলী বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার ফলন বেশি হয়েছে। আমার বাগানে আম্রপালি ছাড়া অন্য কোনো আম নেই। দাম ভালো হলে ৩-৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবো।’
নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদনগর এলাকার আমচাষি হাশিম উদ্দিন বলেন, ‘১৬ বিঘা জমিতে আমচাষ করেছি। গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ আম হয়েছে। তবে দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় আম আকারে কিছুটা ছোট। আশা করছি এবার সব মিলিয়ে ১০-১২ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবো।’
হাশিম উদ্দিনের বাগানে গোপালভোগ, ফজলি, সূর্যাপুরি, হাজীপুরি, ল্যাংড়া জাতের আম রয়েছে।
জোবায়দুর করিম বলেন, ‘অন্য জেলার আমে দিনাজপুর সয়লাব হয়ে গেছে। দিনাজপুরের আম বাজারে আসতে আরও ১০-১২ দিন সময় লাগবে। তখন আমের দাম পড়ে যেতে পারে।’
বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর বাজার এলাকার মিনার হোসেন হিরা এক একর জমিতে আমচাষ করেছেন। ফজলি, হাজীপুরি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আম্রপালি জাতের আমচাষ করেছেন। তার বাগানে শতাধিক গাছ রয়েছে। নতুন বাগানে ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছেন এক লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন।
দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারের ফল ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ ফল ভান্ডারের মালিক মঈন বলেন, ‘এবার দিনাজপুরে দ্বিগুণ আম হয়েছে। আমের কোনো ঘাটতি হবে না। এবার বাগানিরা লাভবান হবেন। আমরাও দেশের বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ব্যবসায়ী লিটন হোসেন বলেন, ‘আমের পাইকাররা আসতে শুরু করেছেন। তারা বাগান ঘুরে দেখছেন। আশা করা যাচ্ছে বাজার ভালোই পাওয়া যাবে। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো আম পাওয়া যাবে না।’
দিনাজপুরে আম্রপালি, হিমসাগর, মিছরিভোগ, বারি-৪, গোপালভোগ, গুটি, হাড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের আমগাছ রয়েছে। আবহাওয়াজনিত কারণে এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (উদ্যান) কৃষিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে প্রখর রোদের কারণে কিছু আম ঝরে পড়েছে। তারপরও যে হারে ফলন এসেছে, তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে না বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দিনাজপুরে এবার পাঁচ হাজার ৭২৬ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে এক হাজার ৩৪২টি। এসব বাগান ছাড়াও মানুষের বসতবাড়ির আঙিনা ও ফাঁকা জায়গায় আমগাছ রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জেলায় এবার ৬৮ হাজার ৭১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। এতে ৪৪৮ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হবে বলে আশা করি।