একাদশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য নন্দিত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে জাতীয় সংসদ। সরকারি দলের এই সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে সংসদে আনা শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছে সংসদ। এর আগে সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আলোচনায় অংশ নেন। পরে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়।
বুধবার (৩১ মে) বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। এরপর জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে শোক জানানো হয়।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফারুক ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে ছাত্র জীবনে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। নিষ্ঠা ও সাহসের সঙ্গে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রেখেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে আমরা একে একে মুক্তিযোদ্ধাদের হারিয়ে ফেলছি।
নায়ক ফারুকের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, ফারুক এভাবে চলে যাবেন তা কখনো ভাবিনি। আল্লাহ তার পরিবারকে এই শোক সইবার ক্ষমতা দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কেবল রাজনীতি নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক জগতে তার অবদান রয়েছে। তার মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। সব আন্দোলন-সংগ্রামে আমরা সাংস্কৃতিক কর্মীদের পাশে পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যখন তার নাম নিতেই কেউ যখন সাহস পাচ্ছিল না, তখন সাংস্কৃতিক কর্মীরা এগিয়ে এসেছিলেন। স্বাধীনতার চেতনাকে সামনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ফারুক ভূমিকা রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর দাদি সায়েরা খাতুন ১৯৭৪ সালের ৩১ মে মৃত্যুবরণ করেন উল্লেখ করে এদিন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় তিনি সবার কাছে তার জন্য দোয়া চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দাদি জন্ম দিয়েছিলেন আমার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। যিনি এনে দিয়েছেন আমাদের স্বাধীনতা। এজন্যই আজ আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছি।
তিনি বলেন, চলতি সংসদে আমরা এত সংখ্যক সংসদ সদস্য হারিয়েছি, যা অতীতে কখনো ঘটেনি। পরে আকবর হোসেন পাঠানসহ মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করে মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী।
শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আসাদুজ্জামান নূর, হাবীব হাসান, মেহের আফরোজ, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
এদিন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. কবীর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান, ভাষাসৈনিক এম এ ওয়াদুদের সহধর্মিনী ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির মা রহিমা ওয়াদুদ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে সংসদ। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে মিয়ানমারে হতাহত, বাংলাদেশে আহত এবং দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতে স্মরণে শোক জানিয়েছে সংসদ।