চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় বসছে দুই দিনব্যাপী কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম। প্রথমবারের মতো ঢাকায় হতে যাওয়া এ ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
রোববার (১১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিল (সিডব্লিউইআইসি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিডব্লিউইআইসি জানায়, আগামী ১৩-১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম। এতে ফোরামের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই কমনওয়েলথ সদস্যদের পারস্পরিক সহযোগিতার স্বপ্ন নিয়ে কমনওয়েলথে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ যখন কমনওয়েলথে যোগদান করে, তখন দেশটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং বিধ্বস্ত অবকাঠামো নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। এই জাতির কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি ছিল কমনওয়েলথ সদস্যদের মতো উন্নয়ন অংশীদারদের সমর্থন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে কমনওয়েলথভুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ।
ঢাকায় হতে যাওয়া ফোরামের কারণে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনার কথা জানান সালমান এফ রহমান। তিনি জানান, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও আফ্রিকার অনেক দেশ ফোরামে যোগ দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ঘানা ও রুয়ান্ডা।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, কমনওয়েলথকে অবশ্যই এলডিসি, এলএলডিসি, এসআইডিএস এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দেশগুলোর চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে জিএসপি সম্পর্কিত বাণিজ্যিক সুবিধার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, বেসরকারি পুঁজির প্রবাহ এবং সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহজ করার জন্য প্রস্তুত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য এবং সিডব্লিউইআইসি-এর ডেপুটি চেয়ারম্যান লর্ড সোয়ার কেসিএমজি বলেন, বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য কমনওয়েলথ ৫৬টি দেশের মধ্যে অপার সম্ভাবনা অন্বেষণ ও তা কাজে লাগানোর একটি বিশাল সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি পরিবর্তন হয়েছে। এখানে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।
বাংলাদেশে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের কৌশলগত উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন বলেন, কমনওয়েলথ সদস্যদের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতাদের এ বছর লক্ষ্য হলো অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি ও মজবুত করা, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা এবং বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরার জন্য এটি একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম হবে। এ ফোরামের টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ অন্বেষণ করা।
উল্লেখ্য, এর আগে কমনওয়েলথের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র যেমন- যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, মাল্টা ফোরামের আয়োজন করেছিল।
কমনওয়েলথ হলো ৫৬টি দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা অভিন্ন মূল্যবোধ দ্বারা একত্রিত। বিশ্বের জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ কমনওয়েলথের আওতাভুক্ত দেশগুলোয় বাস করে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ কমনওয়েলথের ৩৪তম সদস্য হিসেবে যোগদান করে।