কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দুই সপ্তাহের প্রখর সূর্য আর তীব্র এবং মৃদু তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড গরমের সাধারণ মানুষ ও কর্মজীবীরা চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা মিলছে না।
এক দিকে কৃষক আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষার্থে সেচ ও শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি দিচ্ছেন। টানা খরার কবলে প্রান্তিক চাষিরা ফসল রক্ষার্থে অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাওয়ায় চরম দুচিন্তায় পড়েছেন। অন্য দিকে কড়া তাপমাত্রা জনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। টানা প্রখর রোদের ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজনও চরম বিপাকে পড়েছেন।
বিশেষ করে তীব্র রোদের তাপপ্রবাহের কারণে দিন মজুর, রিকশাচালক, ঠেলা ও ভ্যানচালকরা কাজে করতে পারছেন না। ফলে প্রচন্ড তাপদাহে অনেকেই অলস সময়ও পাড় করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেড়িয়েছেন। তীব্র গরমে শিশু ও বয়স্কদের মাঝে এক অসহনীয় দুর্ভোগ বেড়েছে। একটু স্বস্তি পেতে ঠান্ডা শরবত, পানি, আইসক্রীম খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা সাধারণ মানুষের।
বৃষ্টিহীন তীব্র গরমে গেল এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা জুড়ে তাপমাত্রা গড়ে ৩৪.৬ ডিগ্রী ওঠানামা করছে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্রের উপরও। এমন প্রচন্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে ফুলবাড়ীবাসীর। এতে করে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। একটু শীতলতার জন্য শিশু-কিশোর সকলেই পুকুর-নদী,বিলে ছোটাছুটি করছে। অসহনীয় প্রচন্ড গরমে গ্রামাঞ্চল কিংবা শহরে শিশু, বয়স্কদের জ্বর-সর্দি ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। কড়া তাপের কারণে নানা বয়সিদের দেখা দিয়েছে চর্ম রোগও। তীব্র তাপদাহে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে মানুষের সমাগম কমায় ব্যবসায়ীদের বিক্রিও কমেছে। আবার অনেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধও রেখেছেন। প্রচন্ড তাপদাহ থেকে একটু স্বস্তি পেতে কেউ কেউ গাছের তলে বাঁশের টং বানিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকে নলকুপসহ পুকুরের পানিতে ঘন ঘন গোসল করতে দেখা গেছে। এদিকে কড়া রোদ ও প্রচন্ড তাপপ্রবাহের জনজীবন যখন বিপর্যয় তখন বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশিডিংয়ে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলার কুরুষাফেরুষা এলাকার কৃষক সিদ্দিক খন্দকার ও হোসেন আলী জানান, এবছর বর্ষা মৌসুমে তেমন কোন বৃষ্টিপাতের দেখা নেই। গত এক মাস আগে আমরা সেচের পানি দিয়ে আমন ধান রোপন করেছি। রোপনকৃত আমন ধান রক্ষার্থে এক দুইদিন পর পানি দিতে দিচ্ছি। এই দুই কৃষক আরও জানান, অনাবৃষ্টির কারণে আমন ধান রোপনে কৃষকের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
উপজেলার বালারহাট বাজারের ভ্যান চালক জহুরুল হক ও হাক্কু মিয়া জানান, জীবনের এই প্রথম রৌন্দের তাপমাত্রা বাহে ! জীবন-বাঁচার তাগিতে ভ্যান চালিয়ে আমাদের সংসার চলে। টানা দুই সপ্তাহেও অধিক সময় ধরে এত তাপদাহ সহ্য করার মত নয়। আবার পেটে খেলে সব কিছুই সহ্য করতে হয় আমাদের। তাই প্রচন্ড গরমেই ভ্যান চালাচ্ছি। এক আট্টা ক্ষ্যাপ মেরে আবার গাছ তলায় ভ্যানের মধ্যেই বসে শুয়ে একটু দম নেই বাহে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ হেক্টর। যা ইতিমধ্যে ৯৯ ভাগ অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সবজি খরিপ মৌসুমে ৪৩৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। টানা খড়ার কারণে আমনসহ বিভিন্ন ফসল রক্ষার্থে কৃষি বিভাগ সেচ ও শ্যালোমেশিনের পানিসহ বিভিন্ন পরামর্শ কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তুহিন মিয়া জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে ২৪ ঘন্টা আবহাওয়া পূর্ভাস রংপুর বিভাগে অস্থানীয় দমকা হাওয়াসহ হালকা ও মাঝারী ধরণের বৃষ্টিপাতসহ বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। রংপুর বিভাগে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা দিন ও রাতে ১ থেকে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘন্টা বৃষ্টিপাতের প্রবনতা অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি জানান, ফুলবাড়ীসহ কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে গত ২২ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত গড়ে তাপমাত্রা ৩৪.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বিরাজ করেছে। যা গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এএম/