ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর এবার বাংলাদেশ সফরে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকনির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশন। এক সপ্তাহের ঢাকা সফরে প্রতিনিধিদলটি নির্বাচন কমিশন,সরকারি কর্মকর্তা,রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবে। নির্বাচনের আগে মার্কিন প্রতিনিধি দলটির এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
আসছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলা হচ্ছে। চলতি বছর জুড়েই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঢাকা সফরে আগ্রহের একটা বড় দিক ছিল এই নির্বাচন। অবাধ,সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এসব দেশ ও সংস্থার তাগিদও রয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা অতিমাত্রায় দেখা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রাক নির্বাচনী প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে গেছেন। রিকার্ডো কেলেরির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল গেলো ৯ জুলাই ঢাকায় আসেন। ২৩ জুলাই ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগেও ওই প্রতিনিধি দল সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রায় ১০০টি বৈঠক করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর এবার ৭ অক্টোবর ঢাকা সফরে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচনী প্রতিনিধি দল।যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দক্ষিণ এশীয়বিষয়ক সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ল এফ ইন্ডারফার্থসহ ছয়জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ এই প্রতিনিধি দলে থাকবেন বলে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার জানিয়েছেন।
প্রতিনিধি দলের অন্যরা হলেন-যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সাবেক ডেপুটি(প্রশাসক) বনি গ্লিক, মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য মারিয়া চিন আবদুল্লাহ, মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাবেক সহযোগী পরামর্শদাতা জামিল জাফর, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই)এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক পরিচালক মনপ্রীত সিং আনন্দ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের জ্যেষ্ঠ পরিচালক জোহানা কাও।
নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বায়ান্ন টিভিকে বলেন,‘কোনো দেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আগে সেই দেশের নির্বাচনী পরিবেশ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। আর ওই দলের রিপোর্ট অনুযায়ী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো বা না পাঠানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত নেয় দেশটি।’
মার্কিন এই প্রাকনির্বাচনী প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর গুরুত্বপূর্ণ কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমি গুরুত্বপূর্ণ বলবো না। তবে বেশ অর্থবহ। প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফর শেষে আসছে নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক প্রবণতা, উদ্বেগের বিষয় এবং সুপারিশ তুলে ধরবে। তাছাড়া দলটি ওয়াশিংটন ডিসিতে নীতিনির্ধারক এবং বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে সমর্থনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করবে। প্রতিনিধি দলটি মার্কিন প্রশাসনকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে রিপোর্ট দেবে। ওই রিপোর্টে নির্বাচনে সীমিত আকারে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা তারও সুপারিশ থাকবে। একারণে আমি মনে করি প্রাকনির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশনের ঢাকা সফর কিছুটা হলেও অর্থবহ।’
রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীরের সাথে একমত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অধ্যাপক ড.শহীদুজ্জামান। তিনি বায়ান্ন টিভিকে বলেন,প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংগঠন,আন্তর্জাতিক মিডিয়া সংগঠন, ঢাকায় বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। সফর শেষে তারা আসছে জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ সংশ্লিষ্ট অনুসন্ধান এবং সুপারিশ সরবরাহ করবে। তাই তাদের ঢাকা সফর খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
তবে জাতীয় নির্বোচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকনির্বাচনী পর্যবেক্ষক মিশনেরর ঢাকা সফর তাদের নিজস্ব ব্যাপার বলে মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান।
তিনি বায়ান্ন টিভিকে বলেন,‘বেসিক্যালি আমি তাদের এই সফর পছন্দ করি না। সরকার একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে দায়িত্ব পালন করছে সেখানে মার্কিন প্রতিনিধি দলের আসার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সময়ের বিশেষ দূত ওয়ালিউর রহমান আরও বলেন, ‘মার্কিন প্রতিনিধি দল আসলে আসুক। সবার সাথে সাক্ষাত করবে।নির্বাচন কমিশন তাদের হ্যান্ডেল করবে। সমস্যা কোথায়? না আসলেও ক্ষতি নেই।’