সিঙ্গাপুরে অভিবাসীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রতিটি প্রবাসীরা চিন্তিত। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী গতকাল ৪৭ জন বাংলাদেশী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়৷ সবমিলিয়ে সংখ্যাটি দুইশ জনের কাছাকাছি হবে৷ গত ৫ ও ৬ ই এপ্রিল কোন দেশের কতজন আক্রান্ত হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ না করায় সঠিক আক্রান্তের সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি৷
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশে আমাদের পরিবারও উদ্বিগ্ন। প্রতিদিন নিয়ম করে তাদের কল দিয়ে জানাতে হয় যে, আমরা সুস্থ আছি। আমাদের মুখে সুস্থ আছি কথাটা শুনে আপনজনের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে উঠে। আমাদের সুস্থতার খবর শুনে তারা একটু শান্তিতে ঘুমাতে যায়৷
হঠাৎ অভিবাসীদের করোনায় আক্রান্তের কারন জানার জন্য এই পর্যন্ত ২২ টি ডরমিটরিতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের সাথে কথা বলে যেটা জানতে পেরেছি সেটা হলো, বেশীরভাগ ডরমিটরির অবস্থা অস্বাস্থ্যকর। ডরমিটরির কর্তৃপক্ষ এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।এমনকি কিছু কিছু ডরমিটরিতে প্রায় যৌথ ওয়াশরুম, কিচেন এমনকি যৌথ ডাইনিং টেবিল ব্যবহার করতে হয় । এসব জায়গায় কোন কারনে একজন আক্রান্ত হলে খুব সহজেই অন্যদের মাঝে তা ছড়িয়ে পড়ে।
যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সাথেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি৷ এ পর্যন্ত ১০ জনের সাথে কথা বলেছি। তাদের শারীরিক অবস্থা এখন ভালো৷ তবে তারা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
কিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে একজন বলেন, আমি ২৫ই মার্চ কাজের সাইটে কয়েকজনের সাথে কাজ করেছিলাম৷ বাসায় ফেরার পর জ্বর অনুভব করি।
২৬ শে মার্চ আমার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়৷ তাই অফিসে কল করে বলি আমি রেস্ট নিবো কাজে আসতে পারব না। অফিস থেকে বলা হয় বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। আমি ডাক্তারের কাছে না গিয়ে জ্বরের ট্যাবলেট খেয়ে বাসায় ঘুমিয়ে থাকি৷ বিকেলে সুস্থবোধ করি৷
কিন্তু ২৭ তারিখ সকালে আবারো জ্বর আসে৷ বসকে বলে ছুটি বাড়িয়ে বাসায় বিশ্রাম নেই৷ বিকেলের দিকে ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার ঔষধ দেয়৷ ঔষধ খেয়ে সুস্থবোধ করি।
তার দুইদিন পর আমার রুমের একজন সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়৷ সে ডাক্তার দেখালে ডাক্তার তার করোনাভাইরাস পরীক্ষা করে পজিটিভ পায়।
সে করোনায় পজিটিভ শুনে আমরা সবাই ভয় পেয়ে যাই। ২ ই এপ্রিল রুমের সবার টেস্ট করা হয় এবং সবাই করোনায় পজিটিভ হয়৷
এখন খুব আফসোস হচ্ছে আমার জন্যই রুমের সবার মাঝে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। আমি যদি প্রথম দিন ডাক্তারকে বলতাম করোনাভাইরাস টেস্ট করার জন্য তাহলে হয়ত রুমের অন্যরা নিরাপদ থাকত।
তার সাথে ও অন্যদের সাথে কথা বলে যা বুঝতে পারলাম করোনাভাইরাসে প্রবাসীদের আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারন আমাদের অবহেলা।
আমরা অসুস্থ হলে অনেকেরই গোপন রাখি। দেশ থেকে আনা নাপা, প্যারাসিটামল কিংবা সিঙ্গাপুরের প্যানাডল খেয়ে সুস্থ হবার চেষ্টা করি। ততক্ষণে ভাইরাসটি অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে৷