‘আমরা চাই না মালদ্বীপের মাটিতে বিদেশি সৈন্য থাকুক। আমি মালদ্বীপের জনগণের কাছে ওয়াদা করেছি একদিন বিদেশি সৈন্যদের এদেশ থেকে বের করে দেব।’ বললেন মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মেদ মুইজ্জু।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
গেলো মাসে ড. মোহাম্মেদ মুইজ্জু মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। নভেম্বরের শেষ দিকে তিনি মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিবেন।
সাক্ষাতকারে ড. মোহাম্মেদ মুইজ্জু বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আমি ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাত করেছি এবং তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি মালদ্বীপের মাটিতে একজনও ভারতীয় সৈন্য থাকতে পারবে না। দ্রুতই তাদেরকে সরিয়ে নিতে হবে।’
ভারতীয় সৈন্যদের বের করে দিতে তিনি আর কোনো সময় চান না।
মালদ্বীপে দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় প্রভাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চীনপন্থি ড. মুইজ্জা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় দিল্লির সঙ্গে মালের কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মেদ সলিহ ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি দিল্লির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য উদ্যোগী হন। দেশটির সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেন এবং মালদ্বীপের ভূখণ্ডে ছোট্ট সামরিক বাহিনী পরিচালনায় ভারতকে অনুমতি দেন।
কিন্তু এমন অবস্থার মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ড. মোহাম্মেদ মুইজ্জা নির্বাচিত হওয়া ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পর্যবেক্ষণের জন্য কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থিত এ দ্বীপরাষ্ট্রকে পাশে রাখতে চায় ভারত। এজন্য দেশটিকে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে নয়া দিল্লি। এখন যদি ভারতের সৈন্যদের চলে যেতে বাধ্য করা হয় তবে তা হবে দিল্লির জন্য একটি বড় ধাক্কা।
অন্যদিকে মুইজ্জুকে সমর্থনকারী জোটভুক্ত দল ও নেতারা সলিহের ভারত নীতিকে মালদ্বীপের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন। মুইজ্জুর জোট চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পক্ষে। চীন দেশটির অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ এবং অনুদানের আকারে মালদ্বীপে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
এবারের ভোটে এশিয়ার ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে ভারত ও চীনপন্থি শিবিরের বিভাজন বেশ স্পষ্ট। ভারত মহাসাগরের এই দেশটিতে ভারত ও চীন তাদের প্রভাব খাটাচ্ছে বেশ জোরালোভাবে। প্রায় পাঁচ লাখ জনসংখ্যার এ দ্বীপরাষ্ট্র কৌশলগত দিক থেকে এমন জায়গায় অবস্থিত, যেটি বাণিজ্য ও নিরাপত্তা উভয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা বাহিনী ২০২১ সালের দিকে জানায়, ভারতীয় বিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় ৭৫ জন ভারতীয় সৈন্য তাদের দেশে রয়েছে।