ইসরায়েলকে গাজায় যুদ্ধ থামাতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইরান। দেশটি বলেছে, এখনই যুদ্ধ না থামালে এই অঞ্চল ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে’।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় হামলা বন্ধ না করলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান।
তিনি বলেন, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেয়ায় এই পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও ‘অভিযুক্ত’ করা যায়।
এর কয়েক ঘণ্টা পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার সৈন্যদের সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, তার লোকেরা তাদের জীবনের জন্য যুদ্ধ করছে। একইসঙ্গে হামাসের বিরুদ্ধে চলমান এই যুদ্ধকে ‘ডু অর ডাই’ বলেও আখ্যায়িত করেন তিনি।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় গেলো দুই সপ্তাহে ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় ৪ হজার ৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ইসরায়েল শনিবার থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে বিমান হামলা জোরদার করার কথা ঘোষণা করেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির-আব্দুল্লাহিয়ান তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রক্সি ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিচ্ছি, তারা অবিলম্বে গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বন্ধ না করলে, যে কোনও মুহূর্তে যে কোনও কিছু ঘটে যেতে পারে এবং এই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’
তিনি বলেন, তেমন কিছু ঘটলে তার ফলাফল অতি ‘তীব্র, তিক্ত’ এবং ‘সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ার’ হতে পারে। আর সেটাও আবার আঞ্চলিক এবং যুদ্ধের পক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছেন, উভয় ক্ষেত্রেই।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সামরিক সমর্থন এটাই প্রমাণ করে যে গাজায় চলমান সংঘাত ‘যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইসরায়েল পরিচালিত একটি প্রক্সি যুদ্ধ’।
অবশ্য গাজার এই সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তারাও। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন মার্কিন সেনা বা নাগরিকদের ওপর ‘আক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি’ পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যদি কোনও গোষ্ঠী বা কোনও দেশ এই সংঘাতকে আরও প্রসারিত করতে চায় এবং এই অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়... তাদের জন্য আমাদের পরামর্শ হচ্ছে: এমনটি করবেন না।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও হিজবুল্লাহ বা হামাসের মতো ইরানি মিত্রদের কাছ থেকে চলমান সংঘাত আরও ‘বৃদ্ধি করার আশঙ্কার’ কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ইসরায়েলি এবং মার্কিন নাগরিকদের রক্ষা করতে ‘সকল ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে’ যুক্তরাষ্ট্র।
গাজায় সংঘাত শুরুর পর সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট সৈন্যদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ইরাকি ঘাঁটিতে ড্রোন এবং রকেট হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়াও রোববার লেবাননের সীমান্তের কাছে মোতায়েন থাকা ইসরায়েলি সৈন্যদের অবস্থান পরিদর্শন করেছেন নেতানিয়াহু।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবনের জন্য যুদ্ধ করছি। এটি আমাদের ঘরের জন্য যুদ্ধ, এটি অতিরঞ্জিত কোনও কিছু নয়, এটি যুদ্ধ। এটি ডু অর ডাই পরিস্থিতি - তাদের মরতে হবে।’
এসময় হিজবুল্লাহকে যুদ্ধে না নামতে সতর্ক করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘(যুদ্ধে নামলে হিজবুল্লাহ) তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করবে। এবং আমরা তাদের অকল্পনীয় শক্তি দিয়ে আঘাত করব। এটি তাদের এবং লেবানন রাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসের কারণ হবে।’
অবশ্য লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে, তারা ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।
গাজায় সংঘাত শুরুর পর ইসরায়েল ও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সামরিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লেবানন সীমান্তে সংঘাতে ইসরায়েলে কমপক্ষে পাঁচজন ইসরায়েলি সেনা ও একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
এছাড়া হিজবুল্লাহর তীব্র হামলার মুখে সীমান্ত এলাকার আরও হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে ইসরায়েল।
এছাড়া গেলো ৭ অক্টোবর সীমান্তে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে হিজবুল্লাহর ১৯ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন বলে শনিবার জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠী। ইসরায়েলি বাহিনীর বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ানো ঠেকানোর কৌশল হিসেবে সংঘাতে ব্যস্ত রাখার লক্ষ্যে হিজবুল্লাহ সীমান্তে উত্তেজনা তৈরি করেছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন।
ইসরায়েলও বলেছে, হিজবুল্লাহর সাথে তাদের যুদ্ধে জড়ানোর কোনও আগ্রহ নেই। হিজবুল্লাহ সংযত থাকলে সীমান্তে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হবে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ওই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও বৃহত্তর সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এ নিয়ে আরব বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকায় স্থল হামলা শুরু করলে ওই অঞ্চলে ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলে পুরোদমে হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।