জনগণের দাঁড়গোড়ায় ডিএসই’র সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধশালী এবং টেকসই পুঁজিবাজার বিনির্মাণে নিরন্তরকাজ করে যাচ্ছে ডিএসই ৷ বললেন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান ।
রোববার (১০ ডিসেম্বর) গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ বিজনেস স্টাডিস-এর ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনুষ্ঠিত পুঁজিবাজার কেন্দ্রিক একাডেমিক শিক্ষা সচেতনতামূলক কর্মশালায় তিনি এ বক্তব্য দেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান সিপিএ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিএসই’র বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটা বিএসইসি, ডিএসই এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আইওএসকোর কার্যক্রমের একটি অংশ। এতে করে আর্থিক বিনিয়োগের পরিবেশ ও সময় ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়৷ তাই আইওএসকোর সদস্য হিসেবে আমরা সারাদেশে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দেশব্যাপী বিনিয়োগকারীদের সচেতন করার জন্য এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যাতে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ঝুঁকি এড়িয়ে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করে। জনগণের দাঁড়গোড়ায় ডিএসই’র সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধশালী এবং টেকসই পুঁজিবাজার বিনির্মাণে নিরন্তরকাজ করে যাচ্ছে ডিএসই৷
বিশেষ অতিথি বিএসইসি’র কমিশনার জনাব মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, আজকের যে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি অনুষ্ঠান, তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়। এটা সবার জন্য আয়োজন করা হয়েছে। আজকে এখানে যারা ছাত্র-ছাত্রী রয়েছেন তারা হয়ত এখনো কোনো উপার্জনে নেই। কিন্তু আমরা আজকে আপনাদের ভবিষ্যতের বিনিয়োগ নিয়ে কিছু কথা বলব। একজন মানুষ যা আয় করে, তা থেকে সব খরচের পরে যে বাড়তি অর্থ থাকে সেটাই বিনিয়োগ করে। এই বিনিয়োগের ফলে জিডিপির যে প্রবৃদ্ধি তাতে আমরা কত শতাংশ সেভিংস করতে পারি তাতে অবদান রাখে। আগে আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন সেটা ছিল ১৩-১৪ শতাংশ। আর আজকে সেটা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত আয়ে উন্নীত হতে যে মাথাপিছু আয় লাগবে সেখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে তা সম্ভব হবে। আজকে অনেকে বিদেশ থেকে টাকা পাঠান কিন্তু কোনো বিনিয়োগ করতে পারেন না। আবার অনেক সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ না করার কারণে আর্থিকভাবে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হন। এর কারণ হচ্ছে তারা বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। আমাদের দেশে একজন মানুষ বিনিয়োগ করে কত আয় আর লোকসান করল সেটা সে বুঝতে পারে না। দেখা যায় তার আয়ের থেকে লোকসান বেশি হয়। এর কারণ হচ্ছে তার বিনিয়োগের সঠিক জ্ঞান নেই। তাই আমরা শুধু এখানে না, সারা দেশের সব যায়গায় এই প্রোগ্রাম আয়োজন করি। আজকে ডিএসইর মাধ্যমে এখানে এসেছি আপনাদের জানাতে।
বিএসইসি’র কমিশনার আরো বলেন, আমরা এখনি বলছিনা আপনারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। তবে পুঁজিবাজার বিনিয়োগের একটি অন্যতম ভালো মাধ্যম। যখন আপনারা আয় করবেন এবং আপনাদের বিনিয়োগের জন্য অর্থ থাকবে তখন এখানে যেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে পারেন। আমরা একটি বয়সের পর আর আয় করতে পারব না, তখন তাহলে কি করবেন। তাই ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের যায়গা। পুঁজিবাজারকে অনেকেই কাঁচাবাজার মনে করেন। যারা এখানে প্রতিদিন কেনা-বেচা করতে চান। কিন্তু এটা সেই যায়গা না। এখানে আপনার দৈনন্দিন ব্যয় বাদ দিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। তাই পুঁজিবাজারে যদি দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা যায় তবে এখান থেকে রিটার্ন সম্ভব।
অর্থনৈতিক সকল সূচকে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে হবে। বুঝে শুনে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। যারা অন্যের কথায় উত্সাহিত হয়ে বাজারে বিনিয়োগ করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সকলকে সাথে নিয়ে দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। তবেই স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম ব্যাপক। এখানে বিশ্বখ্যাত নাসডাক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেডিং কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে৷ এই পুঁজিবাজারের মাধ্যমেই দেশের ছোট বড় সব ধরনের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়৷
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব বিজয়ের এই মাসে জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে এই লিটারেসি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস রুমের বাইরেও অনেক কিছু শিখতে পারবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে৷ বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা অনেক মজবুত। একটি দেশের পুঁজিবাজার যতটা উন্নত, সে দেশের অর্থনীতি ততটা ভালো। একটি ভালো পুঁজিবাজার ছাড়া ২০৪১ সালের উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেজন্য ডিএসইর আজকের এ আয়োজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, বর্তমানে উন্নত বিশ্বে সবাই সবার সঙ্গে ব্যবসা করছে। যা থেকে ফিরে আসা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের মেগা প্রকল্পগুলো পুঁজিবাজারে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। এতে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের অনেক উন্নতি হবে। যে দেশ যত বেশি উন্নত, সে দেশে তত বেশি বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। যার একটি বাংলাদেশ, কারণ বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুবিধা দেয়া হয়। এতে বাংলাদেশের জিডিপি যেমন বাড়বে তেমনি মানুষের আয়ও বাড়বে। সুদৃড় অর্থনীতির সঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ধরে রাখতে হবে। আর এ জন্য ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি ও পুঁজিবাজার সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি।