৪৫-এ বিএনপি

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ১ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৮ সালের এই দিনে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে দলটির যাত্রা শুরু হয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যেও টিকে থাকার চেষ্টা করছে দলটি। ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে রাজপথে। ইতোমধ্যে দলটির যৌথসভায় রাজধানীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র‌্যালিতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ব্যাপক সমাগম করার প্রস্তুতি নেয়া হলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর এ দলটি প্রতিষ্ঠা করেন সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৭৬ সালে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন। এরপর ১৯৭৭ সালে ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেন এবং তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার লক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগ দল) প্রতিষ্ঠা করেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তার ছিলেন এ দলের সমন্বয়ক। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাগ দল বিলুপ্ত করে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করা হয়। জিয়াউর রহমান হন দলের চেয়ারম্যান। ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এর পর এ দলের সভাপতি নির্বাচিত হন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। এইচ এম এরশাদের সামরিক শাসন চলাকালে ১৯৮৪ সালে বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনেও বিএনপি জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এর মধ্যে ১৯৯৫ সালে এ দলটি একতরফা বিতর্কিত নির্বাচন করে ১৫ দিনের জন্য সরকার সরকার গঠন করেছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি।

১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে ওই দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল ছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। কিন্তু ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলটিকে ব্যাপক ভরাডুবির সম্মুখীন হতে হয়েছে। দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে রাজনীতির বাইরে থাকার শর্তে জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া। আর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ডে বসবাসরত।

দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বাণীতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই শুভদিনে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশের জনগণকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। বিএনপি দেশ ও মানুষের উন্নয়ন এবং বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে সমমর্যাদার ভিত্তিতে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে গভীরভাবে বিশ্বাস করে। বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহান দিনে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গতিশীল কার্যক্রম এবং নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করার দৃষ্টান্ত এক অনন্য প্রেরণার সৃষ্টি করেছে।’ 

তিনি বলেন, এ ঘোর দুর্দিনে জনগণকে সংগঠিত করার কোনো বিকল্প নেই। আওয়ামী দুঃশাসনের ছোবলে চারদিকে মহা-আশঙ্কা পরিব্যপ্ত। আইন, বিচার, প্রশাসনকে সরকার কব্জার মধ্যে নিয়ে জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালাচ্ছে। খুন-খারাবি, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারের মাত্রা এখন বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সরকার যেখানে জনগণের প্রতিপক্ষ সেখানে মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকতে পারে না। এ সরকার অধিকার হরণের খেলায় মেতে উঠেছে। সুতরাং গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতেই হবে। দেশের বর্তমান এ ক্রান্তিকালে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। 

৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিএনপি।  কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশব্যাপী কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন,  প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা, একইদিন বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হবে যেখানে বিএনপি’র জাতীয় নেতারাসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন।

এছাড়াও দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যে পোস্টার প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। এছাড়াও আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর বিএনপি’র উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরসহ সব ইউনিটে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। স্থানীয় সুবিধা অনুযায়ী আলোচনা সভা, র‌্যালি ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এসি

Recommended For You

Exit mobile version