আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

বিধিনিষেধ শিথিলতায় বাড়তে পারে “লকডাউন”

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই সকাল থেকে দেশে চলছে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন)। এই বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। চলমান বিধিনিষেধে সরকারি, বেসরকারি অফিস, শিল্প কারখানা, পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। মানুষের চলাচলে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে রোববার (১ আগস্ট) থেকে গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যা শিল্প-কারখানা শ্রমিকদের জন্য স্বস্তির খবর।

দীর্ঘ এই কঠোর বিধিনিষেধে ইতোমধ্যে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা।  এ অবস্থায় আগামী ৫ আগস্টের পর বিধিনিষেধ বাড়বে নাকি থাকছে না আর লকডাউন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন জনমনে।

এরইমধ্যে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) আগামী ৫ আগস্টের পরে আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুক্রবার (৩০ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে জানান তিনি। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছেন জীবন-জীবিকার সমন্বয় করে,  কিছু বিষয় শিথিল করে বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

তবে কঠোর বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলেনি সরকার।

তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আগেই যেমনটা বলেছিলেন, ধাপে ধাপে সব কিছু খোলা হবে। একসঙ্গে খোলা হবে না।

তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। ।

প্রতিমন্ত্রী জানান, আমাদের সবারই নিজ নিজ জায়গা থেকে চেষ্টা করা উচিত। আমরা তো এভাবে বাঁচতে পারব না। আমাদের মাস্ক পরতে হবে, কাজও করতে হবে। আমাদের টিকার সংকট কেটে গেছে। এখন সবাইকে টিকার আওতায় আনা হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের এই সময়ে বিধিনিষেধ তুলে দিলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে। এরপরও রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হচ্ছে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিষয়টি কঠোর নজরদারির আওতায় রাখতে হবে। না হলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, টিকাকরণ করা গেলে সংক্রমণ কমে আসবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় জোরালোভাবে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার সক্ষমতা স্বাস্থ্য বিভাগের রয়েছে। কিন্তু টিকার সেই পরিমাণ জোগান না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও মাস্ক ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু মানুষের এতে চরম অনীহা রয়েছে। এতে করে সংক্রমণ বাড়ছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় সবার প্রতি আহ্বান থাকবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও মাস্ক ব্যবহারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। না হলে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হবে।

এদিকে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর  শুক্রবার থেকেই গ্রাম থেকে মানুষের ঢাকামুখী ঢল নেমেছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সড়ক-মহাসড়কেও যানবাহন চলাচল বেড়েছে। যে যেভাবে পারছে ঢাকায় ঢুকছে। অনেককেই দেখা গেছে, কোনো যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেঁটেই ঢাকায় ঢুকছেন।

এদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও দোকান লকডাউনের আওতায় না রাখার দাবিতে আগামীকাল রোববার (১ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করবে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। সেখানে বর্তমান পরিস্থিতিতে নানা সমস্যা ও সমাধানের পথ তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আর কোনো লকডাউন চান না দোকান মালিকরা। পুঁজি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে দোকান খুলে দেওয়া প্রয়োজন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এবারে প্রথমে ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা বাড়িয়ে ১৪ জুলাই করা হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘কঠোরতম বিধিনিষেধ’জারি করে সরকার।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন