স্কুলের প্রধান শিক্ষক এখন চা বিক্রেতা
গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারীর অতি পরিচিত মুখ খাইরুল ইসলাম বাদশা । সবাই তাকে চেনেন শিক্ষক মশাই হিসেবেই । মহামরি করোনার কারণে নিজ চেষ্টায় গড়ে তোলা তার স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। আয় রোজগারের পথ বন্ধ। সংসার চলে না। বেঁচে থাকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। যে আঙিনায় কোমলমতি শিশুদের জন্য পাঠশালা গড়েছিলেন, এখন সেখানেই চলছে তার চায়ের দোকান। চায়ের দোকানই এখন তার আয় রোজগারের মূল উৎস।
খাইরুল ইসলামের বাড়ী সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের কাউন্সিলের বাজারে । তার ছেলে-মেয়ে পাঁচ জন। এর মধ্যে তিন ছেলে, দুই মেয়ে। ছেলেরা ঢাকায় পোষাক শিল্পে কাজ করে। আর দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে এস.এসসি পরিক্ষার্থী আর ছোট মেয়ে নবম শ্রেনীতে পড়াশুনা করে। অভাবে সংসারে অভাবের কারনেই বাধ্য হয়েই পেশা বদলে ফেলছেন।
খাইরুল ইসলাম তার পৈত্রিক জমি বিক্রি করে কাউন্সিলের বাজারের রেজিয়া মার্কেটের পাশে চার শতক কিনেন। সেখানে ২০০১ সালে গড়ে তোলেন আহমোদিয়া স্কুল অ্যান্ড কোচিং সেন্টার। যাত্রা শুরু করেন আরো ১০ জন শিক্ষক দিয়ে।
খাইরুল ইসলাম বাদশা ছিলেন প্রধান শিক্ষক। ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিশু শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্য কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু করোনার কারণে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রধান শিক্ষক খাইরুল ইসলাম জানান, যে সময়ে অন্য সহকর্মীদের খোঁজ খবর নেওয়া কথা ছিল। কিন্তু আমারই সংসার চলে না । বাধ্য হয়ে নিজ হাতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানের বারান্ধায় চা বিক্রি করছি। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। শিক্ষক হয়ে কার কাছে হাত পাতাবো। কাকে বলবো সাহায্যের কথা। চা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চালাচ্ছি।
মহসিন আলী নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুলটিতে পড়ালেখার মান ভালো ছিলো। এ কারণে অনেক দূর থেকেও ছেলে-মেয়েরা এখানে পড়ার জন্য আসতো। আমার দুই মেয়েও এই স্কুলে পড়তো। খরচও তুলনামূলক কম ছিলো। কিন্তু এখন স্কুল বন্ধ। তাই মেয়েদের পড়ালেখাও আগের মতো হচ্ছে না।’
স্কুলের শিক্ষিকা হামিদা বেগম বলেন, ‘স্কুলের আয় দিয়ে আমার সংসার ভালোই চল ছিলো। সেখানে আরও নয় জন শিক্ষক ছিলেন। সব মিলে আমরা ভালো ছিলাম। করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এখন ধার দেনা করে আর স্বামীর সামান্য আয়ে কোনো মতো সংসার চালিয়ে নিচ্ছি।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রাফিউল আলম বলেন, করোনার কারণে অসংখ্য স্কুল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা এমন স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তা করার জন্য চেষ্টা করছি।
মুনিয়া