আর্কাইভ থেকে এশিয়া

আফগান সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়িয়েছে পাকিস্তান

প্রথম নজরে তেমন পরিবর্তন চোখে পড়বে না কারো। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত ভালো করে নজর দিলে বোঝা যাবে, পাকিস্তান-আফগানিস্তানের ব্যস্ততম সীমান্ত এলাকা তোরখামে কয়েকদিনের ব্যবধানে অনেক পরিবর্তন এসেছে। গেল ১৫ আগস্ট তালেবান বাহিনীর হাতে পতন হয়েছে আফগানিস্তানের নির্বাচিত সরকারের। কাবুলের দখল নিয়েছে তালেবান। ইতোমধ্যে পতাকার পরিবর্তন এনেছে আফগানিস্তানকে ইসলামি আমিরাত হিসেবে ঘোষণা দেওয়া তালেবানগোষ্ঠী।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, তোরখাম সীমান্তের আফগানিস্তান পাশে তাই দেশটির জাতীয় পতাকার পরিবর্তে উড়ছে তালেবান পতাকা। সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে সশস্ত্র তালেবান সদস্যরা।

এদিকে আফগান শরণার্থীদের পাকিস্তানে অবাধে প্রবেশ বন্ধে তোরখামসহ আফগানিস্তানের সঙ্গে সীমান্তবর্তী সব এলাকায় রেঞ্জার্স (পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী) কর্মীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়িয়েছে পাকিস্তান।

বৃহস্পতিবার তোরখাম সীমান্ত পরিদর্শনের পর বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকদিন আগেও প্রতিদিন যেখানে এই সীমান্ত দিয়ে ছয় থেকে সাত হাজার মানুষ যাতায়াত করতো, সেখানে বৃহস্পতিবার সীমান্ত এলাকার দুই দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন।

পাকিস্তান সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক সদস্য জানিয়েছেন, গেল মে মাসে তালেবান বাহিনী যখন আফগানিস্তান দখলের অভিযান শুরু করে তখন থেকে এই সীমান্ত এলাকায় শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল। তবে তালেবান বাহিনী কাবুল দখলের পর থেকে আফগান যাত্রীদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই না আফগানিস্তান থেকে এদেশে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ুক। এছাড়া ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ শরণার্থী পাকিস্তানে অবস্থান করছে। আরও শরণার্থী নেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। এ কারণেই সীমান্ত এলাকায় লোকবল বৃদ্ধি ও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

আহসান খান নামে একজন আফগান নাগরিক বলেন, নিজের পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে বৈধভাবেই পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য তোরখামে এসেছেন তিনি। আহসান খান আরো জানান, স্কুলে পড়ার সময় থেকেই এই সীমান্ত দিয়ে চলাচল করছি। একটা সময় ছিল, যখন বাবা এবং আমি জালালাবাদ থেকে সরাসরি এই সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে পারতাম।

এদিকে, দেশ ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে আফগানদের ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করছে তালেবান। তোরখাম সীমান্তের পাকিস্তান পাশে একটি ছোটো খাবারের দোকান চালান ওয়ায়িদ আলি। তিনি জানান, তালেবান বাহিনী সীমান্ত এলাকায় পাহারা শুরুর পর থেকে আফগান শরণার্থীদের দেখা যাচ্ছে না। অথচ কয়েকদিন আগে, তালেবান বাহিনী যখন আফগানিস্তানের শহরগুলো দখল করছিল তখন এই সীমান্তে প্রচুর আফগান শরণার্থী ভিড় করেছিল। তাদের মধ্যে যারা পাকিস্তানে প্রবেশ করতে পেরেছে তাদের অনেকেই আমাকে বলেছিল, তালেবান শাসন থেকে বাঁচতে এখানে এসেছে তারা।

কাবুল তালেবানের দখলে যাওয়ার পর তোরখাম সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার থেকে আফগান পণ্যবাহী ট্রাক এবং পাসপোর্ট ও ভিসাধারী বৈধ যাত্রীদেরই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।

আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘ সীমান্ত আছে। ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্তানে প্রবেশে ইচ্ছুক সব আফগান নাগরিকের জন্য বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা বাধ্যতামূলক করেছে দেশটি।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন