আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আজ

করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে বৈঠকে বসছেন শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তি ও কর্মকর্তারা।

বৈঠকে চলমান করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা ছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের টিকা দেওয়ার অগ্রগতি, শিক্ষার ক্ষতি পোষানোর সম্ভাব্য কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত শনি অথবা রোববার সংবাদ সম্মেলন করে জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

বুধবার (২৫ আগস্ট) নিজ দফতরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জোর প্রস্তুতি চলছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট দফতর প্রধানদের নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনা বৈঠক রয়েছে।

তিনি বলেন, এখন করোনা সংক্রমণ নিচের দিকে। সব বিষয় আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। করোনা মোকাবিলা সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটি ও দেশের প্রবীণ শিক্ষাবিদদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন।

কবে নাগাদ এ সংবাদ সম্মেলন হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি শেষ হবে ৩১ আগস্ট। এর আগেই হবে।

জানা গেছে, দুপুরে ভার্চুয়াল এ বৈঠকে চলমান করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন নীতিনির্ধারকরা। বৈঠকে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা- এ দুই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং তিন সচিব যোগ দেবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান ও সদস্য, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সরকারও এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এ কারণে এখনকার পরিস্থিতি ‘রিভিউ’ (পর্যালোচনা) করা প্রয়োজন। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকার এখন দুই ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চায়। এক. বিশ্ববিদ্যালয়, দুই. পরীক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শুধু মাস্টার্স এবং অনার্স চতুর্থ বর্ষ বা সপ্তম ও অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে তোলার চিন্তা করছে। পরীক্ষামূলকভাবে তাদের সরাসরি পাঠদানও শুরু হবে।
 
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, আজকের বৈঠকে মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের কতটুকু প্রস্তুতি তা জানতে চাওয়া হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাসিক হলগুলো সংস্কার ও বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমরা সেগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টন করে দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও প্রস্তুতির কথা আমাদের জানিয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। বুধবার পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমণের হার ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মঙ্গলবার ১৫.১২ আর সোমবার ১৫.৫৪ শতাংশ ছিল সংক্রমণের হার।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংক্রমণের হার অনেক নেমে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশ বা এলাকার সংক্রমণ ৫ শতাংশে নেমে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে এখনো পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে দেশের সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর গত ১৭ মাসে মোট ২২ দফা ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ মে ও ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েও করোনার ঊর্ধ্বগতির কারণে তা সম্ভব হয়নি।

মুক্তা মাহমুদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন