আর্কাইভ থেকে জাতীয়

বাংলাদেশে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কমেছে: মার্কিন গবেষণা

বাংলাদেশে অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রেকর্ড হারে কমেছে বলে দাবি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউজ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা ও নতুন নতুন উপায়ে সরকারি নজরদারির কারণে এটি হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২ কমেছে।

সংস্থাটির ‘ফ্রিডম অন দ্য নেট ২০২১’ প্রতিবেদনে ইন্টারনেটে বাকস্বাধীনতার সূচকে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪০। ২০২০ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ঘটনাবলি বিবেচনা করে তারা এই গবেষণা করেছে। আগের বছর বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট ছিল ৪২। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ৪৪, ২০১৭ সালে ৪৬, ২০১৮ সালে ৪৯ ও ২০১৯ সালে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ৪৪।
 
এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭০টি দেশকে পর্যালোচনা কয়া হয়েছে। ইন্টারনেটে মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্তর নির্ণয়ে ৩ ধরণের মোট ২১টি প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে এতে। ৩ ধরণের প্রশ্ন হলো- সেবা ব্যবহারে বাধা, কনটেন্টের সীমাবদ্ধতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। প্রায় এক বছর পর ২০২০ সালের আগস্টে তা চালু করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় গত মার্চে তিন দিনের জন্য ফেসবুক ও মেসেঞ্জার বন্ধ করে দেয়া হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আল-জাজিরা ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি নজরদারি সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নজরদারি, হ্যাকিং ও মুঠোফোন থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রযুক্তি কিনেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনটির বিরুদ্ধে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদ শুরু হয়। করোনা মোকাবিলায় সরকারের সমালোচনা করে দেয়া ফেসবুক পোস্টের জেরে গত বছরের মে মাসে আটক হন মুশতাক। এটিও উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৮০০-এর বেশি মামলা হয়েছে এবং সরকারের সাইবার ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের অক্টোবরে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় ২ হাজার।’

ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের নয়টি সূচকের মধ্যে সাতটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বাধা, ওয়েবসাইট বন্ধ, ইন্টারনেট বন্ধ, সরকারপন্হি ভাষ্যকার, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আটক, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও কারিগরি হামলা।

প্রাপ্ত পয়েন্টের ভিত্তিতে দেশগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। পয়েন্ট ১০০ থেকে ৭০ এর মধ্যে থাকলে ‘মুক্ত’, ৬৯ থেকে ৪০ এর মধ্যে থাকলে ‘আংশিক মুক্ত’ এবং ৩৯ এর নিচে হলে ‘মুক্ত নয়’। আংশিক মুক্ত শ্রেণির তলানিতে বাংলাদেশ। অবশ্য ২০১৩ সাল থেকে বরাবরই আংশিক মুক্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে বাংলাদেশ।

সার্কভুক্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পেছনে অবস্থান করছে কেবল পাকিস্তান। তাদের পয়েন্ট ২৫। ভারতের ৪৯ ও শ্রীলঙ্কার পয়েন্ট ৫১। এছাড়া অন্য দেশগুলো এই তালিকায় নেই। সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ৯৬ পয়েন্ট পাওপ্যা আইসল্যান্ড। আর ১০ পয়েন্ট নিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা চীনের।

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন