আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

৭৮ বছর পর মা-ছেলের দেখা

আব্দুল কুদ্দুস মুন্সি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দা। তিন ভাই বোনের মধ্যে কুদ্দুস ছিলেন সবার বড়। প্রায় ৭৮ বছর পর আগে ৭ বছর বয়সী শিশু কুদ্দুস ফুপার সঙ্গে রাজশাহী বেড়াতে যান । সেখানে ফুপুর বকুনীতে বাড়ি থেকে রাগ করে বের হয়ে হারিয়ে যান তিনি।

কুদ্দুস জানান, ফুপার বাসা থেকে বের হয়ে আত্রাই সিংসাড়া গ্রামে চলে যান তিনি। সন্ধ্যার দিকে খয়মুন নামের এক বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁকে নিজের কষ্টের জানালে ওই মহিলা জনৈক সাদেকের বাড়িতে নিয়ে যায় তাকে। সাদেকের কোনো সন্তান তা থাকায় কুদ্দুসকে লালন পালন করেন তিনি। তাঁরাই কুদ্দুসকে খতনা করায়।

পনেরো বছর বয়সে স্থানীয় চৌউড়বাড়ি গ্রামে তাদের এক আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে কুদ্দুসকে বিয়ে দেন সাদেক। সেই থেকে বারুইপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন কুদ্দুস। ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে সন্তানের জনক হন তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন কুদ্দুস। তিন ছেলের মধ্যে ২ ছেলে দেশের বাইরে থাকে। সংসার জীবন সুখের হলেও মমতাময়ী মায়ের কথা ভেবে প্রায়ই ঢুঁকরে কেঁদে উঠতেন তিনি।

তাঁর জীবনের এই গল্প শুনে গত এপ্রিল মাসে ফেসবুকে বৃদ্ধ কুদ্দুস মুন্সির স্বজনদের সন্ধান চেয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেন বারুইপাড়ার বাসিন্দা খান মোহাম্মদ আইয়ূব। সেই ভিডিও চোখে পড়ে কুদ্দুসের চাচাতো ভাইয়ের নাতি শফিকুল ইসলামের।  ভিডিওর সূত্র ধরেই শফিকুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন রাজশাহীতে যান। এরপর ভিডিও কলে মা মঙ্গলুন্নেসার সঙ্গে কুদ্দুসকে কথা বলিয়ে দেয়া হয়।

কুদ্দুস বলেন, তাঁর মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে প্রথম যখন কথা হয়, তখন মা তাকে বলে ‘তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস? তোর ছোট বেলায় হাত কেটে গিয়েছিলো। মায়ের মুখে এ কথা শোনার পরে তিনি বলেন, ‘মা তোমার কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল? তখন মা বলে বাম হাতের বুড়ো আঙুল কেটে গিয়েছিল। তখন বুঝতে পারি তিনিই আমার মা’।

হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পাওয়াটা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না বৃদ্ধ কুদ্দুস। ১১৫ বছরের বৃদ্ধা মা’কে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছেন। কখনো বা চুমু খাচ্ছেন। মা-ছেলের সব জমানো কথা ঝড়ছে চোখের জল হয়ে।

মা‘ছেলের মিলনের এমন দৃশ্য দেখতে দুরদুরান্ত থেকে ভীড় করছে উৎসুক মানুষ।

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল সিদ্দিক, জানিয়েছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারটির খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে সহযোগিতা করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন