আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

গোদাগাড়ীর ইউএনও’র বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জানে আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (৬ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে রাজশাহী জেলা স্পেশাল ট্রাইবুনাল ও সিনিয়র দায়রা জজ আদালয়ে মামলাটি করেন আইনজীবি অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস। ফৌজদারি বিশেষ মামলা নং ৫/২০২৩।

মামলাটি আদালতে উত্থপিত হলে বিচারক আব্দুর রহিম শুনানি শেষে রাজশাহী জেলা সমন্বিত দুদককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে মামলা দাখিলকারী অ্যাডভোকেট রায়হান কবির জানান। এর আগেও গেলো ২৬ জানুয়ারী ওই আইনজীবী গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বিরুদ্ধে রাজশাহী পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস মামলায় উল্লেখ করেন, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে মো. জানে আলম ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর যোগদান করেন। এর পর থেকে ঘুষ ও দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে প্রায় ৫ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।

উপার্জনকৃত অর্থ থেকে সে তার দেশের বাড়ীতে বিলাস বহুল বাড়ী, জায়গা জমি ও গবাদী পশু পালনের খামার তৈরি করেছেন। এছাড়াও নামে বে-নামে অনেক জায়গা জমি ক্রয় করেছেন। মামলার সঙ্গে এসবের ভিডিও সংযুক্ত করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের সিংহভাগ টাকা, আশ্রয়ন প্রকল্পের বাড়ী নির্মাণে বিভিন্ন ইটভাটা থেকে ইট ও বালুমহাল থেকে বিনামূল্যে জোরপূর্বক বালু নেয়া এবং ঘর-বাড়ী নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অতি নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব ঘর নির্মাণ সম্পন্ন না হলেও তিনি সরকারীভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি শতভাগ দেখিয়েছেন।

বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের বিল-ভাউচার স্বাক্ষর করার জন্য ৯টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করেন। টিআর-কাবিখাতে উন্নয়নমূলক কাজে ১০% কমিশন গ্রহন করেন। এডিপির টাকায় ভাগ-বাটোয়ারায় অংশ নিয়ে কমিশন গ্রহণ করেন। এছাড়াও আদিবাসীদের জমি কেড়ে নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হলেও আদিবাসীদের ঘর দেয়া হচ্ছে না। বরং ইউএনও টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দিয়েছেন। যার ফলে অনেক আদিবাসী টাকা না দিতে পারায় তারা ঘর পাননি।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দুর্নীতির এক পর্যায়ে ঘুষ না পেয়ে বিএমডিএর কাজে বাধা প্রদান করেন। গোদাগাড়ী উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ১৭৮ নং রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ নং দাগের ১.৮৬ একর খাস পুকুরটি ১১ লক্ষ ৭ হাজার ৫৪২ টাকা ব্যয়ে পুন:খননের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে মেসার্স আলী হোসেন এন্টারপ্রাইজকে অর্ডার প্রদান করে। এর পর ঠিকাদার আরিফ হোসেন ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর পুকুরটি পুনঃখননের কাজ শুরু করে।

সেই কাজে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানে আলম পুকুর পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়নের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। কিন্তু আসামী ঘুষের টাকা না পাওয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে গেলো ৫ জানুয়ারী গোদাগাড়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসানকে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানে খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকেভেটর গাড়ীর দুটি ব্যাটারি নষ্ট হয়। গাড়ীটির ইঞ্জিনের অধিকাংশ যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে তাকে বালু ঢুকিয়ে অকেজো করে দেয়া হয়। শেষে গাড়ীর হেলপার আল মারুফকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে ১৫ দিনের জেল ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য অবৈধ ভাবে পুকুর ভরাট করেছে যা গোদাগাড়ী সদর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর মৌজায় শূন্য দশমিক ৫৮ একরের পুকুরটি ১৮৮ নম্বর জেএল-এর ২৮৫ নম্বর দাগে অবস্থিত। এটি একটি খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। রেকর্ড অনুযায়ী এই জমির শ্রেণি পুকুর। পরিবেশ আইন-১৯৯৫ এর বিধান অনুসারে যেকোনো জলাশয় ভরাট নিষিদ্ধ। কিন্তু এর পরেও আসামী আইন অমান্য করে পুকুরটি ভরাট করেছেন।

একই ভাবে ৮৮ টি খাস পুকুর ইজারাতেও দুর্নীতি করে অবৈধ অর্থ আয় করেন। এছাড়াও নানান সময়ে সাধারণ জনগণের সঙ্গে অমানবিক আচারণ করেন। সাধারণ লোকদের মারপিট, চর-থাপ্পার এমনকি গবাদি পশু (ছাগল) কে পিটিয়ে হত্যা করে। ভ্রাম্যমান আদালত আইনের অপব্যবহারও করেছেন তিনি।

মোবাইল কোর্ট আইনের ৮ ও ৯ ধারা লঙ্ঘন বিভিন্ন আসামীকে সাজার সঙ্গে ১০ হাজার টাকার উর্দ্ধে জরিমানা করেন। কিন্তু আইনের এই ধারা মোতাবেক মোবাইল কোর্টে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড দেয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু আসামী জোর পূর্বক অবৈধ ভাবে জরিমানার টাকা আদায় করে রাজ-কোষে গ্রহন করে কমিশন গ্রহণ করেন।

এছাড়াও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দাপ্তরিক নিয়োগে দুর্নীতি করেন। তার ভয়ে কেউ তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করিতে পারেন না। বরং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিতে গেলে সে মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে সাজা দেয়ার ভয় দেখায় এমনকি সাজা প্রদান করেন।

এই বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলার বিষয়ে আমি জানি না। অফিসের কাজে বাইরে আছি অফিসে গিয়ে বিস্তারিত জেনে জানাবো।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন