আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

মশা মারতে আবার ভুল পদ্ধতি ডিএনসিসির

শুষ্ক মৌসুম শুরুতে কিউলেক্স মশার প্রকোপ বাড়ায় মশা মারতে ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। লার্ভিসাইডিং (লার্ভা ধ্বংস) ও ফগিং (ধোঁয়া দিয়ে মশা মারার পদ্ধতি) পদ্ধতিতে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

ডিএনসিসি বলে আসছে, ফগিং পদ্ধতিতে মশা তো মরেই না, শুধু অর্থেরই অপচয় হয়। যদিও ভুল জেনেও একই নিয়মে মশা নিধনে ছয় দিনের অভিযান নেমেছে সংস্থাটি।

আজ রোববার ডিএনসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন মিরপুরের বাইশটেকি এলাকায় সপ্তাহব্যাপী এ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। শুরু হওয়া বিশেষ এই অভিযান চলবে ১৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময় উদ্বোধনে অংশ নেন প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা, অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান।

গেলো জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরে থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র, কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা প্রশিক্ষণে যান। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রামের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডা সফর করেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। যেখানে তারা মশা নিধনের সঠিক পদ্ধতি শিখেছেন বলে জানান তিনি।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এসে নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মশক নিধনে এতদিন যে ভুল ছিল, সেটি ‘ইচ্ছাকৃত নয়’। ভুলগুলো শুধরে নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করতে চায় উত্তর সিটি করপোরেশন। তবে সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগে আরও সময় লাগবে। ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপাতত পূর্বের পদ্ধতিতেই চলবে মশা নিধন। এখন যদি মশা নিধন পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়া হয়, মশার উৎপাত বাড়বে। আপাতত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাব কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।

ডিএনসিসি জানিয়েছে, শুষ্ক মৌসুম শুরুর কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কিউলেক্স মশার প্রকোপ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে একযোগে বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএনসিসি। বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রমে ৪০০ X ৪০০ গ্রিড পদ্ধতিতে প্রতি ওয়ার্ডকে ৬ ভাগে ভাগ করে প্রতি এক ভাগে এক দিন নিবিড়ভাবে লার্ভিসাইডিং এবং ফগিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এ কার্যক্রমে আগে শনাক্ত করা মশার প্রজননস্থল হিসেবে চিহ্নিত সকল হটস্পটে ব্যাপকভাবে কীটনাশক প্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে হটস্পট অপসারণ করা হবে।

অভিযানের উদ্বোধনকালে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিদিন মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। এখন বৃষ্টির মৌসুম শুরু হয়েছে। তাই আমাদের রুটিন কাজের পাশাপাশি সপ্তাহব্যাপী বিশেষ মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করেছি।

মশা মারতে এই বিশেষ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ডিএনসিসি থেকে নিয়মিত মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। তবে ডিএনসিসি থেকে যে গবেষণার কথা বলা হয়েছে সেটির মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যেত। পাশাপাশি মশা নিধনে তাদের যে প্রচেষ্টা, তা সার্থক হতো।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন