ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দোটানায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
২০২২-২৩ শিক্ষবর্ষের ভর্তিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) গুচ্ছে যাবে না-কি একক পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করবে এ নিয়ে ধোঁয়াশা যেন কাটছেই না। মিটিংয়ের পর মিটিং হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে একক পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হলেও ইউজিসি বলছে ভিন্ন কথা। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গেল বছরে যারা গুচ্ছে অংশ নিয়েছে সকলকেই গুচ্ছেই থাকতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারকরা। এদিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে এখনো অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন ইবির শিক্ষক নেতারা।
এই দোটানার কারণে ইবির ভর্তি কার্যক্রম শুরুর বিষয়েও সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে ঢাবি, রাবি, জাবি, চবি ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে। ফলে আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষা শুরুর লক্ষ্যে ইবির কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি। মঙ্গলবার সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের জরুরি সভায় উপাচার্যকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদে পাশকৃত আইন দ্বারা পরিচালিত একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা হয়।
জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১২৫ তম সভায় (জরুরি) সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ গুচ্ছের ভোগান্তি, সমস্যা ও বিভিন্ন সুপারিশ উপাচার্যের কাছে তুলে ধরেন। পরে ২০ মার্চ ইউজিসির বৈঠকে উপাচার্য ইবির সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরেন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি উপেক্ষা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে বলে জানায় ইউজিসি।
পরে ক্যাম্পাসে ফিরে গত ২৫ মার্চ উপাচার্য শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। এসময় তিনি ইউজিসির বিষয়গুলো তুলে ধরলে নেতৃবৃন্দ তাদের অনড় অবস্থানের কথা উপাচার্যকে অবহিত করেন। এরপর মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে আবারো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসার পর উপাচার্য মহোদয় আমাদের সাথে বসছিলেন। সেখানে তিনি ইউজিসির বিষয়গুলো তুলে ধরেন। আমরা বলেছি যেহতু এটা একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এর বাইরে যাওয়ার স্কোপ নেই। সে অনুয়ায়ী কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে মিটিং ডেকে আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির মিটিং ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম শুরুর জন্য অনুরোধ করে উপাচার্যের কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি (উপাচার্য) একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে বলেছিলেন ঢাকা থেকে ফিরে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘চিঠি এখনো পাইনি। চিঠি পেলে শিক্ষকদের নিয়ে আলাপ করবো। সরকার একদিকে সিদ্দান্ত নিয়েছে ইবি ও জবি গুচ্ছে যাবে। আরেকদিকে শিক্ষকদের ছাড়াও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না। ফলে আমাদের তিনজনের (ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার) হ্যাম্পার হচ্ছে। কারণ সরকার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমি শিক্ষকদের ব্যাপারটা সরকারকে জানাবো, শিক্ষকদেরও বোঝানোর চেষ্টা করবো। শিক্ষকদেরও অনুরোধ করবো, সরকার জুলাইয়ের মধ্যে ক্লাস শুরুর একটি রোডম্যাপ দিয়েছে। এটা তারা ভাববেন। আমরা এখন এমন অবস্থায় আছি এককভাবে গেলেও যে সময় লাগবে, গুচ্ছে গেলেও তাই লাগবে। হয়তো ১০-২০দিন হেরফের হতে পারে।’
ইউজিসির সদস্য ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘২৭শে ফেব্রুয়ারি শিক্ষমন্ত্রীর মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত ছিল যারা গতবার গুচ্ছে অংশ নিয়েছে তারা এবারও থাকবে। আমরা ইউজিসির পক্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত তারা কি করবে। বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে যেতে না চাইলে কোনো অসুবিধা নেই। এখানে মুখোমুখি অবস্থানের কোনো বিষয় নয়। যেমন আমরা ঢাবি, রাবি, জাবি, চবিকে তো গুচ্ছে আনতে পারিনি।’