আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টির নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া

ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেরার মুকুট অনেকবার মাথায় উঠলেও, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা এতকাল অধরাই ছিল অস্ট্রেলিয়ার। অবশেষে সপ্তম আসরে এসে শিরোপার দেখা পেল বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি দেশটি। নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের নতুন রাজা এখন অ্যারন ফিঞ্চের দল।

দুবাইয়ের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের দেয়া রেকর্ড ১৭৩ রানের টার্গেটকে একেবারে পাত্তা না দিয়েই জেতে অস্ট্রেলিয়া, আট উইকেট অক্ষত রেখেই কেড়ে নেয় সেরার খেতাব। 

ম্যাচের শুরুতে টসে জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। শুরুটা ভালো না করতে পারলেও, শেষটা দুর্দান্ত খেলেই মাঠ ছাড়ে ব্ল্যাক ক্যাপরা। অস্ট্রেলিয়ার দিকে ছুড়ে দেয় ১৭৩ রানের রেকর্ড টার্গেট।

জবাবে অস্ট্রেলীয়দের শুরুটাও অবশ্য ভালো ছিল না। ৫ রান করেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। এরপরে ম্যাচের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে অজিদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৩ রান। 

৩৪ বলে ফিফটি করে আত্মবিশ্বাস যেন তুঙ্গে ছিল ওয়ার্নারের। আর তখনই ভুল করে বসেন তিনি। ট্রেন্ট বোল্টের পেসের সামনে লাইন মিস করায় উড়ে যায় স্ট্যাম্প! ৩৮ বলে ৫৩ করে ফিরে যান ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়া তখন ১২.২ ওভারে ২ উইকেটে ১০৭।

মার্শ তখনও অন্য প্রান্তে অপ্রতিরোধ্য। ৩১ বলে তুলে নেন ফিফটি। দলকে বিশ্বকাপ এনে দিয়ে মার্শ অপরাজিত ৫৫ বলে ৭৭। অফ ফর্ম কাটিয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও লড়লেন। ১৮ বলে করলেন অপরাজিত ২৮ রান।

এর আগে ব্যাট হাতে কাঁপিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররাও। আর কিউইদের জ্বলন্ত আগুনে যেন ঘি ঢাললেন হেইজেলউড, মিস করলেন কেন উইলিয়ামসের ক্যাচ। মিচেল স্টার্কের ডেলিভারিটি ঠিকঠাক খেলতে পারেন নি উইলিয়ামসন। বল উড়ে এসে পড়ে জশ হেইজেলউডের হাতে! কিন্তু বল তো ধরতেই পারেননি, উল্টো বাউন্ডারি লাইন পেরিয়ে যায়।

আর সেই জীবন পেয়েই উইলিয়ামস দেখিয়ে দিলেন কীভাবে তা কাজে লাগাতে হয়। পরপর দুটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। ৪৮ বলে ৮৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে তবেই থামলেন উইলিয়ামস। মিচেল স্টার্কের ওভারেই ১৯ রান নেয় কিউইরা। ৩ ওভারে ৫০ রান দিলেন এই পেসার। 

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও ছেড়ে কথা বলেননি উইলিয়ামসন। তার ওভারে টানা দুটি বিশাল ছক্কায় ফিফটি করেন মাত্র ৩২ বলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাতটি ফাইনালে তখন পর্যন্ত দ্রুততম ফিফটি ছিল এটিই। পরের ইনিংসেই যে মার্শ ৩১ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ছাড়িয়ে গেছেন সেটা! জো রুট ও কুমার সাঙ্গাকারার ৩৩ বলে ফিফটির রেকর্ড পেছনে ফেলেন উইলিয়ামসন, তারপর তাকেও পেছনে ফেলেন মিচেল মার্শ।

বিশ্বকাপ ফাইনালের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটি হাতছাড়া হয়ে গেলেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড কিন্তু উইলিয়ামসের হাতেই। পরিস্থিতি বুঝে শেষটায় এসে ঝড় তুলেন তিনি। তবে শতরান করা হলো না। হেইজেলউডের বলে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন স্টিভেন স্মিথের হাতে। ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংস থামে ৮৫ রানে। এটিই বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। গত বিশ্বকাপ ফাইনালে উইন্ডিজ ব্যাটার মারলন স্যামুয়েলসও তুলেছিলেন ৮৫ রান।

উইলিয়ামসন ছাড়া অন্য কিউই ব্যাটসম্যানদের তেমন আক্রমণাত্মক হতে দেয়নি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। দুবাইয়ের ব্যাটিং উইকেটের ফায়দাটাও তেমন নেওয়া হয়নি। ওপেনার মার্টিন গাপটিল ৩৫ বলে ২৮ রান করতেই থামান অ্যাডাম জ্যাম্পা। গ্লেন ফিলিপস ১৭ বলে ১৮। জিমি নিশামও শেষ দিকে ৭ বলে ১৩ রান তুললে কিছুটা স্বস্তি পায় কিউইরা।

বল হাতে হেইজেলউড আগুন ঝরালেন। তার বোলিং ফিগারটা বাঁধিয়ে রাখার মতো ৪-০-১৬-৩! উল্টো পিঠে স্টার্ক ৪ ওভারে দিলেন ৬০ রান। নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে খরুচে বোলিং এটিই। এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের সবচেয়ে ব্যবয়বহুলও। ২০১২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ৪ ওভারে ৫৪ রান দেন লাসিথ মালিঙ্গা।

তবে স্বস্তি এটাই, হতাশা হয়ে ফিরতে হলো না স্টার্ককে। ব্যাটাররা মান তার বাঁচিয়েছেন।

স্কোরকার্ড
নিউজিল্যান্ড: ১৭২/৪ (মার্টিন গাপটিল ২৮, ড্যারেল মিচেল ১১, কেন উইলিয়ামসন ৮৫, গ্লেন ফিলিপস ১৮, জেমস নিশাম ১৩*, টিম সেইফার্ট ৮*; জশ হ্যাজলউড ৪-০-১৬-৩, মিচেল স্টার্ক ৪-০-৬০-০, অ্যাডাম জাম্পা ৪-০-২৬-১, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৩-০-২৮-০, প্যাট কামিনস ৪-০-২৭-০, মিচেল মার্শ ১-০-১১-০)

অস্ট্রেলিয়া: ১৭৩/২ (অ্যারন ফিঞ্চ ৫, ডেভিড ওয়ার্নার ৫৩, মিচেল মার্শ ৭৭*, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২৮; ট্রেন্ট বোল্ট ৪-০-১৮-২, টিম সাউদি ৩.৫-০-৪৩-০, অ্যাডাম মিলনে ৪-০-৩০-০, ইশ সোধি ৩-০-৪০-০, মিচেল স্যান্টনার ৩-০-২৩-০, জেমস নিশাম ১-০-১৫-০)

ফলাফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মিচেল মার্শ (৭৭ রান)
ম্যাচ অব দ্য টুর্নামেন্ট: ডেভিড ওয়ার্নার (২৮৯ রান)

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন