১১৫১টি কারখানার শ্রমিকরা পাননি বেতন-বোনাস
পবিত্র ঈদুল ফিতরে বেতন-বোনাস পাননি ১১৫১টি কারখানার শ্রমিকরা। সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা দেননি কারখানা মালিকরা। শুধু তাই নয়, এই সময়ে প্রায় ১৩০০ কারখানায় ঈদের ছুটি হয়নি। বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, বেসরকারি কারখানা ঈদের আগের সর্বশেষ কর্মদিবস ছিল বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল)।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) থেকে দেশের সব শিল্প কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী ৯৬১৬টি কারখানার মধ্যে ৯৭২৭টি কারখানায় মার্চ মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু ২৬২টি কারখানায় বেতন ও ৮৮৯টি কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস দেননি মালিকরা।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) রাত ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ৯৩৫৪টি কারখানার শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ২৬২টি কারখানায় মার্চ মাসের বেতন দেননি মালিকরা। শতাংশের হিসাবে ২.৭২ শতাংশ শ্রমিকদের বেতন বাকি রয়েছে।
বাকি থাকা কারখানাগুলোর মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ২৮টি কারখানায় এখনো বেতন হয়নি। একইভাবে বিকেএমইএর ১৩টি, বিটিএমএর আটটি এবং অন্যান্য ২১৩টি কারখানায় বেতন দেয়া হয়নি।
অন্যদিকে ৯৬১৬টি কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়েছে ৮৭২৭টি কারখানা। অর্থাৎ ৮৮৯টি কারখানায় বোনাস হয়নি। যা শতাংশের হিসাবে ৯.২৫ শতাংশ।
শ্রমিকরা ঈদ বোনাস পাননি এমন কারখানার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ১২৫টি। একইভাবে বোনাস পাননি বিকেএমইএর ২৭টি, বিটিএমএর ৪৪টি, বেপজার তিনটি ও পাটকল খাতের ১৫টি কারখানার শ্রমিকরা।
এছাড়া অন্যান্য খাতের ৬৪৯৯টি কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের বোনাস দেয়নি ৬৭৫টি কারখানা। সব মিলিয়ে বোনাস হয়নি ৮৮৯টি কারখানায়।
তবে তৈরি পোশাক খাতের সব কারখানায় মার্চ মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে বিজিএমইএ।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সংগঠনের মহাসচিব ফয়জুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত মোট ২১৫১টি কারখানার মধ্যে ঢাকায় চালু রয়েছে ১৮৯৪টি আর চট্টগ্রামে ২৫৭টি। শতভাগ কারখানায় মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা দেয়া হয়েছে ২১৪৫টি। অর্থাৎ দেয়া হয়েছে ৯৯.৭২ শতাংশ কারখানায়। অবশিষ্ট ছয়টি কারখানার উৎসব ভাতা আজকের দেওয়া বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যা আজকের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ নিশ্চিত করা হয়েছে।
সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিজিএমইএর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল থেকে পর্যায়ক্রমে ২০ এপ্রিলের মধ্যে সব শ্রমিকদের ছুটি দিয়েছে পোশাক কারখানাগুলো।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে শ্রমিকদের যথাযথ পাওনা পরিশোধ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় পোশাকখাতের উদ্যোক্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সবার ঐকান্তিক সহযোগিতায় এবারও শ্রমিক ভাই-বোনেরা উৎসবমুখর পরিবেশে পরিবার নিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে যাচ্ছেন।
এতে বলা হয়, ঈদের আগে বেতন ভাতা বিষয়ে সমস্যা হতে পারে এরকম ৪৫০টি কারখানা প্রতিষ্ঠানকে ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় এনে বিজিএমইএ সমস্যার ধরন বুঝে সমাধানের উদ্যোগ নেয়।
বিজিএমইএর সরাসরি হস্তক্ষেপে সমস্যায় থাকা ২৬টি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কারখানার সমস্যার ধরন বুঝে বিজিএমইএ কর্তৃক শ্রমিক, মালিক, ফেডারেশন নেতাদের সঙ্গে যৌথ আলোচনার মাধ্যমে কারখানা বিক্রি করে, মেশিনপত্র বিক্রি করে অথবা ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে।
এবার আইন বহির্ভূত দুটি ইস্যুতে, এপ্রিল মাসের ১৫-২০ দিনের অগ্রিম বেতন ও বাড়তি ছুটির দাবিতে কিছু কিছু কারখানাতে ভাঙচুর হয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা ছিল ঈদের আগে শ্রমিকদের মার্চ মাসের পূর্ণ বেতন ও উৎসব ভাতা দিতে হবে। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি ছিল এপ্রিলের ১৫-২০ দিনের অগ্রিম বেতন দিতে হবে। শ্রম আইন অনুযায়ী, এপ্রিল মাসের বেতন মে মাসের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। শ্রমিক চাইলে মালিকের সক্ষমতা থাকলে অগ্রিম বেতন দেয়া যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ১৭৬৮টি কারখানায় (৮২.১৯ শতাংশ) এপ্রিল মাসের অগ্রিম বেতন দেয়া হয়েছে।