আর্কাইভ থেকে জাতীয়

ঢাকায় দুই লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ ডিএনসিসির

রাজধানীর তাপ কমাতে দুই লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে সংস্থাটি।

বুধবার (৩ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে এই সমঝোতা চুক্তি সই হয়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের (আর্শট-রক) যৌথ উদ্যোগে এ কার্যক্রম পরিচালনা হবে। এ নিয়ে দুই সংগঠনের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। দুই বছরে দুই লাখ গাছ লাগানো হবে।

ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে এশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে একজন চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) নিয়োগ দিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা বুশরা আফরিন।

মেয়র জানান, ঢাকা উত্তর সিটি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর আওতায় ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে উত্তর সিটি এবং ফাউন্ডেশন যৌথভাবে কাজ করবে।

ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগের কথা জানিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এজন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোসহ নানা কর্মসূচি নেয়া হবে। এরইমধ্যে প্রকৃতিবান্ধব কিছু কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা ছাদবাগান উৎসাহিত করেছি। ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ৪০ হাজার এলইডি লাইট বসানো হয়েছে। ২৯টি খাল দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, লাউতলা খাল দখলমুক্ত করে দুই পাশে দুই হাজার গাছ লাগোনো হয়েছে। কালশীতে ১৮ বিঘা জমি উদ্ধার করে সেখানে উন্মুক্ত পার্ক করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মিরপুরে শিশুবান্ধব উন্মুক্ত গণপরিসর গড়ে তুলেছি।

সবার সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, আমি পাড়ার সাহায্য চাই, মহল্লার সাহায্য চাই, স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সবার সাহায্য চাই। কারণ গাছগুলো লাগানোর পর তা যেন কেউ ভেঙে না দেয়। গাছগুলোর যেন যত্ন করি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলি।

গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় ডিএনসিসি এলাকায় তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এ চরম তাপ পরিস্থিতি নগরবাসীর জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং শহরের বার্ষিক উৎপাদনের প্রায় ৮ শতাংশেরও বেশি শ্রম উৎপাদনশীলতা কমছে।

বক্তারা আরও বলেন, গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে তাপপ্রবাহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়নের বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে এবং তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শহরে বসবাসকারী মানুষ। তীব্র তাপপ্রবাহ শহরগুলোর জন্য বেশি বিপজ্জনক এবং প্রতি বছর শহরে ঝুঁকি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাই ঢাকা শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

এশিয়ার প্রথম শহর হিসেবে ডিএনসিসিতে চিফ হিট অফিসার (সিএইচও) পদে নিয়োগ পাওয়া মেয়রকন্যা বুশরা আফরিন বলেন, আমরা শহরের প্রচণ্ড তাপ থেকে মানুষ ও সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিভিন্ন শহরের নেতাদের এবং বিশেষজ্ঞদের একটি বৈশ্বিক সংগঠনে যোগ দিতে পেরে আমি রোমাঞ্চিত। ঢাকার একজন স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আমি জানি, তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপের বিকল্প নেই। ঢাকা শহরে তাপমাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিশেষ করে স্বল্পআয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বস্তিবাসী, অভিবাসী এবং নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার ম্যাট ক্যানেল, অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্যাথি বাঘম্যান ম্যাকলিওড, অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের হিট অ্যান্ড সিটি ডিপ্লোমেসি বিভাগের প্রধান উপদেষ্টা মরিসিও রোডাস, শক্তি ফাউন্ডেশনের ক্লাইমেট চেঞ্জ প্রোগ্রামের প্রধান সোহানি হক ইলিয়াস, শক্তি ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ ও ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন