আবাহনীকে হারিয়ে একযুগ পর চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান
বর্তমান প্রজন্মের ফুটবল ভক্তরা যখন ইউরোপীয়ান ক্লাব ফুটবলে বুদ হয়ে আছে, তখন বাংলার ক্লাব ফুটবলে ১৪ বছর পর ঢাকা ডার্বি আবাহনী লিমিটেড বনাম মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ফেডারেশন কাপে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনাল যেন হার মানিয়েছে রিয়াল রিয়াল-বার্সার এল ক্লাসিকো, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুলের রেড ডার্বিকে।
ম্যাচের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে ছিল নাটকীয়তা। ক্ষণে ক্ষণে পালটে গেছে ম্যাচের চিত্রনাট্য। মঙ্গলবার কুমিল্লায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই দুই ক্লাবের লড়াইয়ে প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী লিমিটেড। ১৬ মিনিটের মাথায় আবাহনীকে প্রথম লিড এনে দেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। এরপর ৪৩ মিনিটের মাথায় ব্যধান দ্বিগুণ করেন দানিয়েল কলিন্দেস।
প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে পড়া মোহামেডানকে ধ্বংসস্তূপ টেনে তোলার দায়িত্ব যেন কাধে তুলে নেন ক্লাবটির স্ট্রাইকার ও অধিনায়ক সোলেমান দিয়াবাতে। ফেডারেশন কাপের ৪৩ বছরের ইতিহাসে ফাইনালে এই প্রথম হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়ে মোহামেডানকে ‘জীবন’ দিয়ে বারবার ম্যাচ ফিরিয়ে এনেছেন তিনিই। মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল পরিশোধ করে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেন দিয়াবাতে। তবে সমতা আনার মিনিট পাঁচেক পর এমেকার গোলে আবাহনী আবার লীড নিলে ৮৩ মিনিটে হ্যাটট্রিক করে মোহামেডান আবার সমতায় ফেরান দিয়াবাতে।
নির্দিষ্ট সময় শেষে ৩-৩ সমতায় ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে আবারও নায়ক দিয়াবাতে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে নিজেই পেনাল্টি আদায় করে তা থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন।
মোহামেডান তখন জয়ের স্বপ্ন বিভোর। কিন্তু নাটকীয়তার বাকি ছিল আরও। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে বক্সের বাইরে থেকে আচমকা শটে ৪-৪ সমতা করেন আবাহনীর ডিফেন্ডার রহমত মিয়া।
শিরোপার মুকুট মাথায় পরতে এরপর শুরু হয় টাইব্রেকারের ভাগ্য পরীক্ষা। টাইব্রেকারে আবাহনীর প্রথম ও পঞ্চম শট ঠেকিয়ে দেন মোহামেডানের বদলি গোলকিপার আহসান হাবিব। মোহামেডানও চতুর্থ শটটি মিস করলে পঞ্চম শটে কামরুল গোল করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালো জার্সি ধারীরা।
ঢাকার ঐতিহ্যাবাহী এই দুই ক্লাব যে একটি ম্যাচ উপহার দিয়েছে তা অনেক দিন মনে রাখার মতো। এ যেন হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ফুটবলকে আবারও ফিরিয়ে আনার এক নতুন সূচনা।