ইচ্ছেমতো ডলারের দাম নিচ্ছে ব্যাংকগুলো : এফবিসিসিআই সভাপতি
ব্যাংকগুলো ইচ্ছেমতো ডলারের দাম নিচ্ছে। লুটের মালের মতো ব্যাংকগুলো যেভাবে পারছে সেভাবে ডলারের দাম নিচ্ছে। বর্তমানে এক ডলারের বিপরীতে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। বলেছেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
আজ বুধবার (৭ জুন) দুপুরে ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনাসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমি ব্যাংক ঋণের সুদ হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষপাতী নই। এতে পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। বর্তমানে পণ্য আমদানিতে এইচ এস কোডের ভুলের জন্য ২০০ শতাংশ জরিমানা করা হয়, তার ২০ শতাংশ পায় কর কর্মকর্তা। বাজেটে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে তা কীভাবে সংগ্রহ করা হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকলে ভালো হতো।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে কিন্তু এনবিআর অ্যানালগই রয়ে গেছে। ভ্যাট আইনের জন্য অনেক টাকা খরচ করা হয়েছে তবে কোনো কাজ হয়নি। ডিজিটাল বাংলাদেশে এনবিআরকেও ডিজিটাল করতে হবে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে আয়কর ও ভ্যাট আদায় করতে হবে। উভয়পক্ষের মধ্যে যত কম দেখা হবে, ততই দুর্নীতি কমবে। রাজস্ব ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশন করতে উপজেলা পর্যন্ত করের অফিস খুলতে হবে। গ্রামপর্যায়ে অনেক মানুষ আছে যারা কর দিতে পারে। গত ১৪ বছরে সরকার গ্রামে অনেক কাজ করেছে। এখন গ্রামের অর্থনীতি অনেক ভালো।
তিনি বলেন, ১৬ টাকার গ্যাস ২৫ টাকা করার প্রস্তাব আমরাই দিয়েছিলাম। তবে আমাদের শর্ত ছিল নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে হবে। ১৬ টাকার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করা হলো কিন্তু আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছি না। আমরা এখন বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালাচ্ছি, এতে প্রতি কিলোওয়াটের দাম পড়ছে ২৫ টাকা। অর্থনীতি টেকসই ও শিল্পোৎপাদন ধরে রাখতে হলে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, অনেকেই সুদ হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির নামিয়ে আনার কথা বলছে, আমি এটা বিশ্বাস করি না। সুদ হার বাড়িয়ে রাতারাতি কিছু একটা হয়ে যাবে এমন না। কারণ, আমাদের ৮০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে। অর্থনীতির বড় অংশ ইনফর্মাল। সুদ হার বাড়ালে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। ৪৩ ধরনের সেবা নিতে হলে আয়কর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক কর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে আপত্তি আছে। দেশের ছয় কোটি মানুষের হাতে স্মার্ট ফোন। এ দুই হাজার টাকা কর দেওয়া কঠিন কিছু নয়। সরকারের রাজস্ব প্রয়োজন। এ জন্য কর নেট বৃদ্ধির প্রয়োজন। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্র বাড়বে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকারের জন্য কঠিন হলেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য ও কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে। এগুলো আমাদের জন্য ভালো, এটা আমরা রেখেছি। আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে। পণ্য যে দামে বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন বা কেনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। বারবার উদ্যোগের পরও কাজে আসছে না।
প্রস্তাবিত বাজেটকে ভবিষ্যৎমুখী বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন প্রধান সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এ সমস্যা স্বীকার করে তা সমাধান উদ্যোগের কথা বলেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। চলতি বছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বছর শেষে তিন লাখ ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা উঠতে পারে। এ বছর রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সম্ভব হবে না।