আর্কাইভ থেকে ছাত্র-শিক্ষক

ইবিতে নবীন ছাত্রকে র‍্যাগিংয়ের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) লালন শাহ হলে থাকা নবীন এক ছাত্রকে দফায় দফায় নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাতে হলটির গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী ছাত্র মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তবে ঘটনার পর সকালে হল ছেড়ে মেসে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে ভূক্তভোগী বলেন, ‘রাত ২টার দিকে আমাকে ১৩৬ নম্বর কক্ষে ডাকা হয়। সেখানে চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফিফ হাসান, তন্ময় বিশ্বাসসহ কয়েকজন আমর ওপর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করে। আমি যৌন হয়রানির শিকার হই।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরে বাইরে চলে আসি। পরবর্তীতে হলে ঢোকার সময় আমাকে আবারও মারধর করা হয়, মারতে মারতে জিয়া মোড়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আমার জামা ছিঁড়ে যায় ও চশমা ভেঙে যায়। পরে বিচার করার জন্য ছাত্রলীগের রুমে (শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ) নিয়ে গিয়ে সেখানে আবার মারধর করে।’

ভুক্তভোগী ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা সবাই গণরুমে থাকেন। ভুক্তভোগী ৩৩০ নম্বর কক্ষে ও অভিযুক্তরা ১৩৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। হলের ছাদে পরিচয় পর্বের পর ভুক্তভোগীকে রুমে ডাকেন অভিযুক্তরা। সেখানে তার ওপর বিভিন্নভাবে র‌্যাগিং করা হয়। র‌্যাগিংয়ের এক পর্যায়ে তাকে নগ্ন করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী।

এদিকে বিষয়টি মীমাংসার জন্য শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় দুই পক্ষকে তার কক্ষে ডাকেন। সেখানে জয় দুই পক্ষের মাঝে মীমাংসার চেষ্টা করেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আফিফ হাসান বলেন, ‘মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিছুটা মনোমালিন্য হয়েছিল। পরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় ভাই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন।’ অপর অভিযুক্ত তন্ময় বিশ্বাসও একই ধরণের কথা বলেন।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘অফিস সময়ের শেষ দিকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আজ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারিনি। সে অভিযোগে যে বিষয়টি উল্লেখ করেছে সেটি কোনোভাবেই শোভনীয় নয়। আবেদনটি গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের আগামীকাল ডেকে তাদের থেকে অধিকতর তথ্য সংগ্রহ করা হবে।’

প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমার অফিসের কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছে শেষ সময়ে একটি অভিযোগ এসেছে। আমি এখনো দেখিনি সে কী লিখেছে। কাল অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, ‘গণরুমের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। তারা আমার কাছে এলে আমি মীমাংসা করে দিয়েছি। দফায় দফায় মারধরের বিষয়টি আমি জানি না। তবে আমি যতটুকু শুনেছি, ওই ছেলে বিকেলে অভিযোগ তুলে নিয়েছে।’

তবে অভিযোগ তুলে নেওয়ার বিষয়ে রাত পৌনে ৮টায় ছাত্র উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে কেউ অভিযোগ তুলে নেওয়ার বিষয়ে জানায়নি।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এক নবীন ছাত্রীকে র‍্যাগিংয়ের নামে নগ্ন ভিডিও ধারণের অভিযোগে পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন