টুং টাং শব্দে মুখরিত রূপগঞ্জের কামারপল্লী
শাকিল আহম্মেদ, রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
কেউ লোহা গরম করছে। কেউ ঠাস ঠাস পেটাচ্ছে। কেউ পানি মারছে। কেউবা আবার ধূপিতে (হাওয়ার ফুলকি ) আগুন দিচ্ছে। হাপর টানছে কেউ কেউ। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। শুধু নিজের গ্রাম নয়, দূরের গ্রাম থেকেও অনেকে এসেছে দা, বটি, ছুরি , চাপাতি বানাতে।
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার কামারপল্লীর কামাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারা বছর ধীরে সুস্থে কাজ করলেও এখন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। দিন রাত টুং টাং শব্দে মুখরিত জেলার বিভিন্ন হাট বাজার ও কামার পল্লীগুলো।
কুরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে দিনরাত টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার পল্লীগুলো। কাজের চাপে কারিগরেরা এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। সারা বছর ব্যস্ত থাকলেও কোরবানির ঈদ আসার আগে সেই ব্যস্ততা পায় ভিন্নমাত্রা। কেউ নতুন দা, বটি, ছুরি, চাপাতি তৈরি করছেন আবার কেউ পুরোনোগুলো শান দিচ্ছেন।
কামাররা জানান, বছরের ১১ মাসে তাদের তেমন কাজ থাকে না। কোরবানির এক মাসই তাদের কাজের মৌসুম। এ সময় তাদের আয়ের সুযোগ হয়। কোরবানির ঈদের আগের এক মাসে ব্যবসা হয়। কোরবানির পশু কাটার সব লোহার সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এখন লোহার দাম বেশি, কয়লার দাম বেড়েছে, কারিগরদের মজুরও বেড়েছে। এখন সব তৈরি করা হচ্ছে, ঈদের তিনচার দিন আগে বেচাকেনা বেড়ে যায়। আর অর্ডার দেওয়া জিনিসগুলো ডেলিভারি দেওয়ার সময় বিক্রি বাড়ে।
কামাররা আরও জানান, কামারদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি কয়লার দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে লোহার দামও। লোহা ও কয়লার দাম বাড়লেও সে তুলনায় কামারদের মজুরি বাড়েনি। ফলে কামার সম্প্রদায় আর্থিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্পকে টেকসই করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
এদিকে কোরবানির পশু কাটাকাটির বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি ও পুরোনো ছুরি চাপাতি শান দিতে কামারের দোকানে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। গত বছরের তুলনায় এবার লোহার দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোহার তৈরি জিনিসের দামও অনেক বেড়েছে বলে জানান ক্রেতারা।প্রয়োজনীয় উপকরনের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। কামাররা মনে করেন, কোরবানির ঈদকে ঘিরে সামনের সময়টা ভালো যাবে এমটাই আশা তাদের। সরকারী সহযোগিতা পেলে হয়তো আরো ভাল করতো কামাররা; ফিরে আসতো এ পেশার জৌলুস এমনটাই প্রত্যাশা কামারদের।