আর্কাইভ থেকে জাতীয়

বৃষ্টিতে রাজধানীতে কমছে গরুর দাম

রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। প্রতি বছর ঈদের দু-একদিন আগে কোরবানির পশুর হাটে সবচেয়ে বেশি গরু-ছাগল কেনাবেচা হয়। এ বছরও সে অপেক্ষাতেই ছিলেন ব্যাপারীরা। তবে তাদের সে আশা ভাসিয়ে দিয়েছে টানা মুষলধারে বৃষ্টি। আর তাতে হাটে দেখা দিয়েছে ক্রেতা সংকট। হু হু করে কমছে গরুর দাম। এ অবস্থায় লোকসান দিয়েও গরু বিক্রির জন্য ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না ব্যাপারীরা।

বুধবার (২৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর বড় বড় কোরবানির পশুর হাটে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে মোটামুটি গরু-ছাগল বেচাকেনা হয়েছে। তাদের অপেক্ষা ছিল শেষ দিনের জন্য। অর্থাৎ ঈদের আগের দিন ভালো বেচাবিক্রির আশায় ছিলেন তারা। কিন্তু সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিতে পশুর হাটে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেক ব্যাপারী গরু বিক্রি করতে না পেরে মাথায় হাত দিয়েছেন। একই সঙ্গে হঠাৎ গরুর দাম পড়ে যাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কাও করছেন তারা।

কয়েকটি পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে হাটে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। অথচ হাট ভর্তি কোরবানির পশু। ক্রেতা সংকটে পশুর কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না ব্যাপারীরা।

ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে গরু লালন-পালন করেছেন। ঈদের আগে ভালো দামে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। আবার অনেকে নামেমাত্র টাকা দিয়ে গৃহস্থের কাছ থেকে গরু নিয়েছে লাভে বিক্রির আশায়। এখন শেষ দিন দুপুর পর্যন্ত বিক্রি করতে না পেরে তাদের অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে। তবে ব্যাপারীরা এখনো হাল ছাড়ছেন না। তারা জানিয়েছেন, বিকেলে ও সন্ধ্যায় বৃষ্টি না হলে কেনাবেচা জমে উঠতে পারে।

গাবতলীর পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, আগের দিন মঙ্গলবারের তুলনায় আজ গরুর দাম কম। তবে হঠাৎ দাম পড়ে যাওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না ব্যাপারীরা। কম দামে বিক্রি করলে লোকসান গুনতে হবে বলেও আশঙ্কা তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে গাবতলী পশুর হাট কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছে। কোরবানির গরু-ছাগলগুলোকে কাদায় দাঁড়িয়ে ও শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে এ অবস্থায় দীর্ঘ সময় থাকলে পশুগুলো অসুস্থ হতে পারে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। তারপরও মাথায় বৃষ্টি নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় সময় গুনতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের।

গাবতলী হাটের প্রবেশ পথে গরু নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না অনেকে। কুষ্টিয়া থেকে এ হাটে এসেছেন নওশাদ হোসেন। নিজের হাতে গরু পালন করে বিক্রির জন্য হাটে এনেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তিনি ক্রেতার দেখা পাননি।

মানিকগঞ্জ সিঙাইড়ের ব্যাপারী আব্দুস সাত্তার। হাটে ১৫টি গরু তুলেছেন এরমধ্যে তিনটি লোকসানে বিক্রি করেছেন। বাকিগুলো কেনা দামের থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কম বলছেন ক্রেতারা।

আব্দুস সাত্তার বলেন, ব্যাংক ঋণ নিয়ে হাটে গরু তুলেছি। অনেকে গোয়াল থেকে কোনরকম টাকা দিয়ে হাটে গরু তুলেছে। ভালো দামে গরু বিক্রি করে এসব টাকা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু এখন দেখছি কয়েক লাখ টাকা লোকসান হবে। কীভাবে টাকা পরিশোধ করবো? হাটে তো ক্রেতা নাই।

হাটে গরু বিক্রি করতে না পেয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছেন ঝিনাইদহের ব্যাপারী ইয়ারুল মন্ডল। গরুর দাম পড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। ইয়ারুল বলেন, ভাই, ক্রেতা নাই। বৃষ্টি বাদলায় হাটে কেউ আসছে না। এবারও মইরে শ্যাষ ভাই। যে গরু ১ লাখ ৮০ হাজারে কেনা সেটার দাম উঠছে ১ লাখ ৬০ হাজার। চোখের সামনে লোকসান দেখতে পাচ্ছি।

তবে হাটে পর্যাপ্ত কোরবানির পশু থাকা এবং বৃষ্টির কারণে ক্রেতাদের হাটে আসতে বিঘ্নতা সৃষ্টি হওয়াকেই গরুর দাম পড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন ব্যাপারীরা। তবে তারা শেষ পর্যন্ত ক্রেতার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে চান।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙা থেকে গাবতলী হাটে আসা ব্যাপারী শহিদুল ইসলাম লাল্টু বলেন, গরুর দাম নাই। কেন এমন হলো কিছুই বুঝলাম না। হাটে ক্রেতা নাই। চার লাখ টাকার গরুর দাম বলছে দুই লাখ। মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা আমাদের।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন