আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সেই মেঘনা বাসের চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই : র‌্যাব

রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে দুই পথচারী চাপা দেয়ায় অভিযুক্ত মেঘলা পরিবহনের চালক রাকিব শরীফের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিলো না। হালকা যানের লাইসেন্স দিয়েই বাস চালাতেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে রাকিব নিজেই এ তথ্য দিয়েছেন। জানালেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আজ রোববার (৯ জানুয়ারি) সকালে কারওয়ান বাজারে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে বাসের চালককে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন।

গতকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) ওয়ারী এলাকা থেকে রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রাকিব জানিয়েছে- মালিককে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ভাড়া পরিশোধ করতে বেশি টাকা আয় করতে হয়। স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালালে যে কয়টা ট্রিপ হয়, তাতে জমার টাকা তুলতেই বেগ পেতে হয় চালককে। তাই ট্রিপ বাড়াতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি। অধিক গতি থাকার কারণে ফ্লাইওভার দিয়ে নামার সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন রাকিব।

কমান্ডার মঈন জানান, দুর্ঘটনার পর চালক বাসটি রেখে পালিয়ে যায়। এরপর ঘটনাটিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় ছায়াতদন্ত শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওয়ারী এলাকা থেকে রাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে স্বীকার করেন।

রাকিবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী তিনি আরও জানান, রাকিব সাত থেকে আট বছর আগ থেকে মেঘলা পরিবহনে বাসে হেলপারি শুরু করেন। এর পাশাপাশি ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নেন। পরে হেলপারি ছেড়ে দিয়ে বাস চালানোর জন্য মেঘলা পরিবহনের বিভিন্ন মালিকদের ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তার কোনো বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো মালিক তাকে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেননি। পরে তিনি তদবির করে সাময়িকভাবে গাড়ি চালানো শুরু করেন। ২০১৯ সালে তিনি হালকা মোটরযান ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্ত হন। সেই হালকা যান ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েই তিনি ভারী যান চালানো শুরু করেন।

মঈন বলেন, ১৫ দিন আগে মালিক সবুর মিয়ার কাছ থেকে দৈনিক দুই হাজার ২৫০ টাকা হারে বাসটি ভাড়ায় চালানো শুরু করেন রাকিব শরিফ। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকালে বাসটি নিয়ে ভূলতা গাউছিয়া থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে ছেড়ে আসেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তান সংযোগে নামার সময় বাসটির অধিক গতি থাকার কারণে এবং ব্রেক কাজ না করায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এতে রাস্তার বাম পাশে আইলেনের সঙ্গে ঘেঁষে নামতে থাকে বাসটি। তখন ফ্লাইওভারে অন্য একটি বাস থেকে যাত্রী নামছিল। সেখানেই গিয়ে ধাক্কা দেয় মেঘলা বাসটি।

এর আগে শনিবার সকালে হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার সামনে ওই বাসের চাপায় শেখ ফরিদ (২৮) এবং মো. বাদশা মিয়া (৩২) নামে দুই পথচারী নিহত হন। একই ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শনিবারের ওই ঘটনায় নিহত একজনের স্বজন ওয়ারী থানায় সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় মামলা করেন।

তাসনিয়া রহমান

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন