আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

ফুলবাড়ীতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে দ্বন্দে বেতন বন্ধ, কলেজে তালা দিলো কর্মচারীরা

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার রাবাইতারী আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে টানাটানির ঘটনায় তিন মাস ধরে বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত শিক্ষক কর্মচারীরা।

টানা তিন মাস বেতন-বোনাস না পাওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানের ৪৪ জন শিক্ষক কর্মচারী পবিত্র কোরবানির ঈদ ভাল ভাবে করতে পারেনি। ফলে বেতন-বোনাস না পেয়ে গত তিন মাস পরিবার-পরিজন চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক কর্মচারীরা। সোমবার সকালে বাধ্য হয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা লাগিয়ে দেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা। তালা লাগানোর ঘটনায় শতশত শিক্ষার্থী ক্লাসে পাঠদান করতে না পেরে বাড়ীতে ফেরত যান। পরে খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মাহফুজার রহমান আসলে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা মুল ভবনের তালা খুলে দেন। এরপর সভপতি অধ্যক্ষের রুমে শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন।

জানা গেছে, গত ৬এপ্রিল ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হোসেন আলী ব্যাপারী অবসর গ্রহন করলে অধ্যক্ষের পদ শুন্য হয়। অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের বিধান থাকলেও গভর্নিং বডি ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হক মনিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে। এ বিষয়ে দায়িত্ব বঞ্চিত সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দপ্তর দায়িত্ব প্রদানের নির্দেশনা পত্র প্রেরন করলেও রফিকুল ইসলাম সরকারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেনি কলেজ গভর্নিং বডি।

এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতন। এরপরও সমাধান হয়নি সৃষ্ট সংকটের। পরে গভর্নিং কর্তৃক প্রদত্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে কুড়িগ্রাম সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন রফিকুল ইসলাম সরকার। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হকের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব বাতিল করে সহাকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সরকারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করার জন্য কলেজ গভর্নিং বডিকে নির্দেশনা প্রদান করেন। এর প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত কলেজ গভর্নিং বডির সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম সরকারের নিকট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের হস্তান্তর করা হয়েছে। এই দুই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের রশি টানাটানির ঘটনায় পাঠদান ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।

ওই প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক ও টিআর প্রতিনিধি জুয়েল সদ্দার জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যকের দায়িত্ব পালনের বাধা সৃষ্টি হওয়ায় তিনমাস ধরে সবার বেতন বন্ধ। সোমবার সকাল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়েছেন। ফলে অত্র প্রতিষ্ঠানে পাঠদান হয়নি। আশাকরি দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী নুর ইসলাম জানান, কে অধ্যক্ষ হোক সেটা আমাদের বিষয় না। আমরা ছোট পদে চাকুরি করি। তিন মাস ধরে বেতন-বোনাস পাইনি। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। সামনে একটা ঈদ গেল পরিবারকে ভাল কিছু খাওয়াইতে পারিনি। খুবই কষ্টে আছি পরিবার-পরিজন নিয়ে। তাই বাধ্য হয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সব কর্মচারী মিলে সকাল ৯ টায় মুল ভবনে তালা লাগিয়েছি। তালা দেওয়ার কারণে কোন প্রকার পাঠদান হয়নি। পরে সভাপতি আশায় দুপুরে ১২ টায় তালা খুলে দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রথমে গভর্নিং বডি জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিলে আমি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলে আদালতের নিদের্শনায় কলেজ গভর্নিং বডি গত ২২জুন তারিখের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে। আমি আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। তিনি আরও জানান, আমাকে দায়িত্ব দেয়ায় পুর্বের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমার দায়িত্ব পালনের স্থগিত চেয়ে আপিল করেন। আমাগী ২০ তারিখ শুনানি হলে আবারও ন্যায় বিচার পাবেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম। তবে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা তিন মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তালা লাগিয়েছেন।

এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক এস এম রেজাউল হক মনি জানান,জোষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে অত্র প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডির আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সহকারী প্রধান শিক্ষক আদালতে মামলা দায়ের করলে আমাকে দায়িত্ব পালনের স্থগিত করে সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যকের দায়িত্ব দেয়া হলে আমি তার বিরুদ্ধে আপিল করি এবং আদালত আমাকে দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেন।

কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মাহফুজার রহমান বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ কর্তৃক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান সম্পর্কিত তথ্য ও পরিপত্র সঠিকভাবে উপস্থাপন না করায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আদালত, অধিদপ্তর ও বোর্ডের নিদের্শে সহকারী প্রধান শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আদালতের সিধান্ত চুড়ান্ত সিধান্ত বলে বিবেচিত হবে।

এ ব্যাপার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই রকেক জানান, আদালত যেভাবে সিধান্ত দিবে আমরা সেই ভাবেই কাজ করবো। যাতে করে ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে ব্যাহত না হয় সে ব্যাপারে তৎপর আছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস জানান, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন