আর্কাইভ থেকে বিএনপি

মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়ে আমাদের থামাতে পারবেন না : ফখরুল

চতুর্মুখী চাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দিশেহারা, তারা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে। মানুষ জেগে উঠেছে , সরকারের পতন ছাড়া মানুষ ঘরে ফিরবে না। বললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানকে কারাদণ্ডের প্রতিবাদে ডাকা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এই অবৈধ সরকার জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। দিশেহারা হয়ে অসংলগ্ন কথা বলছে আওয়ামী লীগ। চতুর্দিকে তারা অন্ধকার দেখছে। তারা দেশের মানুষ, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শত্রু।

দেশের মানুষ জেগে উঠেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, যখন পতন অবশ্যম্ভাবী তখন ক্যারিকেচার করে লাভ নেই। সরকারের সময় শেষ। তাদের পতন ছাড়া মানুষ ঘরে ফিরবে না।

দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে রায়ের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একজন জনপ্রিয় নেতা। যার নেতৃত্বে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন যৌক্তিক পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় এই ফ্যাসিস্ট সরকার তার বিরুদ্ধে একটি ফরমায়েশি রায় দিয়েছে। শুধু তারেক রহমান নন, তার স্ত্রী এই দেশের স্বনামধন্য ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও রায় দিয়েছে।

ফখরুল বলেন, বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে এই জনতা। কারাগারে পাঠিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, হয়রানি করে আমাদের থামাতে পারবেন না। আন্দোলন চলছে, চলবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মামলা দিয়েছে, কীসের? দুর্নীতির! আজকে যিনি অবৈধ ক্ষমতা দখল করে আছেন, তার বিরুদ্ধে প্রচুর মামলা ছিল দুর্নীতির। সেগুলো তো এই বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পত্রপত্রিকায় তার দুর্নীতির ব্যাপারে বহু ছাপা হয়েছে। তিনি পিঠে দিয়েছেন কুলো, কানে দিয়েছেন তুলো।

ফখরুল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত কী বলল সেটা ভাবার আমাদের কোনো দরকার নেই। আমাদের দরকার এদেশের মানুষ। এ দেশের মানুষ সরকারকে বার্তা দিয়েছে। তাড়াতাড়ি বিদায় হও। আর সময় নেই। এদেরকে চলে যেতে হবে। চলে যেতেই হবে।

সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, এরা দেশটাকে কোথায় নিয়ে গেছে, আজ বিশবিদালয়ের উপাচার্যও দুর্নীতি করে। স্বৈরাচারের নিতম্ব থেকে চেয়ার সরানো সবচেয়ে কঠিন কাজ। তাই এদের নিতম্ব থেকে চেয়ার সরাতে হবে। এবার মুক্তির পণ নিয়ে এদেরকে হটাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। একটাই পথ এই সরকারকে সরাতে হবে।

এ সময় তিনি স্লোগান ধরেন, ‘হাসিনা সরকার নিপাত যাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক।’

অস্তিত্ব রক্ষায়, দেশের স্বার্থে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে পদত্যাগ বাধ্য করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি।

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, খেলতে চাইলে ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় এসো। নির্বাচন না করে ক্ষমতায় যেতে পারলে কী আনন্দ, তাই না! খুব তো বলেছিলা খেলতে চাও, তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে রাস্তায় এসো।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগকে সরানোর সংকট শুধু বিএনপির নয়, এটা জাতির সংকট। দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলে দানবকে পরাজিত করতে হবে।

মরণপণ যুদ্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগকে চেয়ারে বসতে দেয়া যাবে না। এবার শেখ হাসিনার অধীন নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।

এর আগে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে আসেন দলটির নেতাকর্মীরা। দুপুরে পর থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

দেখা যায়, নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে রাস্তাটি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। নেতাকর্মীরা হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন। বৃষ্টিতে ভিজে সমাবেশস্থলে অবস্থান নেন তারা। দুইটার দিকে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা শুরু হয় সোয়া তিনটার দিকে।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়া সাদা পোশাকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন