আর্কাইভ থেকে শিক্ষা

জ্বলন্ত বাতির দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করলো ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের এক অসুস্থ শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ছয় কর্মীর বিরুদ্ধে। গেস্টরুমে না আসায় তাকে ধরে এনে এক ঘণ্টা জ্বলন্ত বাতির দিকে তাকিয়ে থাকার শাস্তি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

গতকাল বুধবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আখতার হোসেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছিরকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি রংপুর জেলায়।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের ৬ কর্মী হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামান রাজু, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়ামিন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম ও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রোহান।

তারা সবাই ২০১৯-২০ সেশনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের হল কমিটির পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুছ, রবিউল ইসলাম রানা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বন্ধুরা জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী (আখতার) কয়েক দিন থেকে খুব অসুস্থ। তিনি শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলেন। কারণ গেল এক সপ্তাহ ধরে তার বাবা ব্রেন স্ট্রোক করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অসুস্থতার মধ্যেও তাকে রাতে গেস্ট রুমে ডেকে অভিযুক্তরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এক ঘণ্টা উপরে লাইটের দিকে তাকিয়ে থাকতে বলেন। এরপর কয়েক মিনিট তাকিয়ে থাকার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করায় তার সহপাঠীরা। হাসপাতালে নেওয়ার পরে তাকে ভয় দেখিয়ে অভিযুক্তরা এ কথা কাউকে না বলার হুমকি-ধমকি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আখতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকতা বিভাগের বড় ভাই ও সাংবাদিকদের সহযোগীতায় হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি ভয় পাচ্ছেন অভিযুক্তরা এটা জানার পর তাকে হল থেকে বের করে দিতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের হল কমিটির পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুছ বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

আখতারুল ইসলামের সাথে যা ঘটেছে সেটি ঠিক নয় বললেন রবিউল ইসলাম রানা।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর তারা সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, এই ঘটনায় যদি কেউ ছাত্রলীগের পরিচয় ব্যবহার করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, ঘটনাটির তদন্ত সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন