আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

সবচেয়ে বেশি ওমিক্রন সংক্রমণের ঝুঁকিতে যেসব জেলা

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে এমনটিই দেখা গেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে দেশে সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। শুধু গত সপ্তাহে রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখের বেশি। এর আগে গত বছর জুলাইয়ে করোনার ডেল্টা ধরনের প্রভাবে এক সপ্তাহে লক্ষাধিক রোগী শনাক্তের রেকর্ড হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোববারের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২ হাজার ১৮৩ জন। ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ১৯৬ জন।

গত শুক্রবার শনাক্তের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। ওই দিন নমুনা পরীক্ষার বিচারে শনাক্তের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত দেশে মোট রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৩৬৩ জনের।

যেসব জেলা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ
রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলায় গত একদিনে রোগী শনাক্তের হার ৫০ শতাংশের বেশি। অর্থাৎ প্রায় ২ জনের নমুনা পরীক্ষায় একজন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। শনাক্তের হার বিবেচনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা ঠাকুরগাঁও। এই জেলায় শনাক্তের হার ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। 

এছাড়া রংপুরে নতুন রোগী শনাক্তের হার ৬২ শতাংশ, পঞ্চগড়ে ৫৪ শতাংশ, দিনাজপুরে ৫০ শতাংশ। রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে রাজশাহী (৬২%), নওগাঁ (৫২%), বাগেরহাট (৫৪%), দিনাজপুর (৫০%) গাজীপুর (৫৭%), রাজবাড়ী (৫০%) ও বান্দরবান (৫০%)।

নাটোর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, মেহেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, সুনামগঞ্জ এবং হবিগঞ্জে ৪০ শতাংশের ওপরে নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা লিমা বলছেন, যেসব জেলায় আগে সংক্রমণ বেশি হয়েছিল, সেখানে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যাওয়ায় আক্রান্তের হার কমে যায়। আবার যেসব এলাকায় আগে সংক্রমণ বেশি ছিল না, সেসব এলাকায় ভাইরাস দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে।

তিনি মনে করেন, দেশে মানুষ খুব অসুস্থ হয়ে না পড়লে ডাক্তারের কাছে যায় না বা টেস্ট করাতে চায় না। হয়তো এসব জেলায় এখন উপসর্গ বেশি হওয়ায় তারা টেস্ট করাচ্ছে বেশি। আবার আগে আক্রান্তের হার কম হওয়ায় এখন সেখানে ভাইরাসও বেশি ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি টিকা কম নেওয়া, অসচেতনতা ইত্যাদি বিষয়ও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।

সংক্রমণ কমেছে পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোয়
দেশে করোনার সংক্রমণ প্রথমদিকে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর ইত্যাদি জেলায় বেশি দেখা গিয়েছিল। তবে এখন গাজীপুর ছাড়া অন্য জেলাগুলোয় সংক্রমণের হার অনেক কমে এসেছে।

কিশোরগঞ্জে এখন সংক্রমণের হার ১৮ শতাংশ। মুন্সীগঞ্জে ১৪%, নারায়ণগঞ্জে ১৫%। তবে নরসিংদীতে এখনো সংক্রমণের হার ৩৩ শতাংশ। শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জে সংক্রমণের হার ৪০ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছে নোয়াখালী জেলায়। এদিন ২৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে মাত্র ২৩ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের দিক থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ জেলার মধ্যে আরও রয়েছে ফেনী (১৩%) ও লক্ষ্মীপুর (১৮%)।

একসময় ঢাকায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হতো। কিন্তু গত কিছুদিনে রাজধানীতে নতুন রোগী শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। একইসময়ে ঢাকায় ২৬ হাজার ২৯৭টি নমুনা পরীক্ষার করে ৬ হাজার ২০১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্তের হার ২৩ শতাংশ।

তবে মৃত্যুর দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর এই বিভাগের জেলাগুলোয় ১২ হাজার ৪১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ৪৩ শতাংশের বেশি।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক তাহমিনা শিরিন বলছেন, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ কাজ করতে পারে। তবে সাধারণত যেসব এলাকায় চলাচল বা লোক সমাগম বেশি থাকে, সেখানে সংক্রমণও বেশি হয়। আবার যেসব এলাকায় আগে সংক্রমণ বেশি হয়েছে, সেখানে আক্রান্তের হার কিছুটা কমে যেতে পারে।

যদিও সরকারি তথ্যে এই আক্রান্তরা করোনাভাইরাসের কোন ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন, তা বলা হয়নি। তবে দেশের বিজ্ঞানীরা এর আগে বলেছেন, একসময় সংক্রমণে ডেল্টা ধরনের প্রাধান্য থাকলেও এখন ওমিক্রন সেটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ঢাকায় জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ৬৯ শতাংশের শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা (আইসিডিডিআর, বি)।

আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা সংস্থা, বাংলাদেশ বা আইসিডিডিআর'বি একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অন্তত ওমিক্রনের তিনটি সাব-টাইপ ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিশ্বের একশোর বেশি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। এই ধরন করোনার অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন