জেলখানায় খালেদা জিয়ার খাবারে কিছু মেশানো হয়েছে কি না সন্দেহ : রিজভী
যে মহিলা (খালেদা জিয়া) স্বাভাবিকভাবে জেলখানায় গেলেন। তিনি আজ গুরুতর অসুস্থ কেন? জেলখানায় তার খাবারের মধ্যে সরকার কোনো কিছু মিশিয়েছে কি না এটা নিয়ে জনগণ আজকে সন্দেহ প্রকাশ করছে। ঠিক যেমন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু নিয়েও রহস্য দেখা দিয়েছে। বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় জিনজিরা বিএনপির কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুপুরে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আমরা আজ শঙ্কিত। যিনি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার প্রতীক তাকে তো সহ্য করবে না। শেখ হাসিনা ও তার প্রতিভূরাও করবে না। পরে তিনি ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেরাণীগঞ্জ এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এসময় বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন মাস্টার, মাহমুদুর রহমান সুমন, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, একদিকে পুলিশ আরেকদিকে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যেও আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত আছে। আজকে দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য স্বৈরাচারের গুলিতেও পিছু হটে না। খালেদা জিয়া ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে নিরলস নেতৃত্ব দিয়েছেন, সংগ্রাম করেছেন। তার এই ভূমিকা গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার যোগত্যা সম্পন্ন। যে নেতা জনগণের কাছে ওয়াদা পূরণ করে তাকে জনগণ কখনো ভুলে না। এটার দৃষ্টান্ত বেগম জিয়া।
তিনি বলেন, আপনারা মনে করে দেখুন সেই এরশাদের সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, যারা এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিবে তারা হবে জাতীয় বেঈমান। কিন্তু তার ৪৮ ঘণ্টা না যেতেই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে নির্বাচনে যাবেন। কিন্তু বেগম জিয়া করেননি। এগুলো তো জনগণ যাচাই করেন। সুতরাং বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বেগম জিয়া জিতেছেন। শেখ হাসিনা কিন্তু জিততে পারেননি। এটাই বেগম খালেদা জিয়ার কৃতিত্ব। তিনি আজও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করছেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য মানুষের জন্য লড়ছেন। এ কারণেই তিনি শেখ হাসিনার টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। তাকে সহ্য করছে না সরকার। আদালতকে ব্যবহারের মাধ্যমে মিথ্যা মামলায় রায় দিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি এখন জীবন যন্ত্রণায় ভুগছেন। তার জন্য আমরা কিছুই করতে পারিনি। আমাদের অনেকেরই সন্দেহ হয়, শেখ হাসিনার মতো এমন নিষ্ঠুর শাসক ক্ষমতায় থাকলে আরও ষড়যন্ত্র হবে।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বুধবার বলেছেন, তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু আপনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর দায়িত্ব কার? আপনি ক্ষমতা থেকে সরলেন না কেন? ক্ষমতায় রাখা এবং ক্ষমতা থেকে সরানোর দায়িত্ব জনগণের। আপনিই তো জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, জনগণ যাতে সুষ্ঠু ভোটে অংশগ্রহণ করতে না পারে। এ কারণেই নিশিরাতের ভোট করছেন, একতরফা নির্বাচন করছেন। আমাদেরকে তো আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। বিচারকদের দিয়ে জুলুমের পরিকাঠামো নির্মাণ করেছেন শেখ হাসিনা। আজকে আদালতকে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে।
শেখ হাসিনা সুষ্ঠু ভোট চান না, তিনি গণতন্ত্রের কথা বলে মূলত গণতন্ত্রের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করছেন বলে মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা যে কি সেটা মানুষ জানে। কিন্তু তারা এটাও বোঝে যে গণতন্ত্র মানে জনগণের ক্ষমতা। প্রয়োজনে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রাখবে প্রয়োজন হলে ভোট না দিয়ে সরিয়ে দিবে। সুতরাং আপনিই তো জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আপনাকে সরানোর ষড়যন্ত্র কে করবে? আপনাকে সরানোর বৈধ এবং সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হলো জনগণের। আপনি সেই জনগণকে বন্দি করে রেখেছেন। আর আপনাকে সরনোর ষড়যন্ত্রের কথা বললে জনগণের হাসি দেয়া ছাড়া কিছুই নেই। আপনি তো সুষ্ঠু ভোটকে কবরে নিয়ে গেছেন।
এএম/