আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

করোনার আতুঁড় ঘরে শুরুর অপেক্ষায় শীতকালীন অলিম্পিক

বৈরি পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলেও শীতকালীন অলিম্পিকের আবেদন সব সময়ই আলাদা। নাম করা তারকাদের উপস্থিতি না থাকলেও রোমাঞ্চকর ইভেন্টগুলোর জন্যই দর্শক মহলে এই আসরের প্রতি আগ্রহ ব্যাপক। চার বছর পরপর আয়োজিত এই অলিম্পিক ঘিরে থাকে বেশ আয়োজন। আজ শুক্রবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় বেইজিং ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শুরু হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে প্রায় শেষ হয়ে এসেছে অলিম্পিক আয়োজনের সব ধরনের প্রস্তুতি।

বরাবরের মত এবারো বেইজিং অলিম্পিকের পর্দা উঠবে মশাল র‌্যালি দিয়ে। তবে এর মাঝে নতুনত্ব এনেছে আয়োজকরা। মশাল র‌্যালি মূলত তুষার সংস্কৃতি বরফের তৈরী ভ্যানুগুলোর ওপর ভিত্তি করেই প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে দেখা যায় প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ফোক সংস্কৃতি। 

বরফ এবং তুষার ভিত্তিক ইভেন্টগুলোর ভ্যানুগুলো তৈরী করা হয়েছে মূলত চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে। ১২০০ বহকের বিশাল বহর নিয়ে শুরু হবে র‌্যালি। তিনদিন ব্যাপী এই আয়োজন, বেইজিং থেকে শুরু হয়ে ইয়াং কিং ঘুরে শেষ হবে ঝাংজিয়াকুতে। এবারের অলিম্পিকের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ১৫টি ইভেন্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অ্যালপলাইন স্কি, ক্রস কান্ট্রিং স্কিসহ আরো অনেক মজার গেমস। এগুলোর জন্য নতুনভাবে তৈরী করা হয়েছে ১২টি ভেন্যু। যার উদ্বোধন হবে বেইজিংয়ের, দ্যা ইয়াং কিং-এ।

ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম আসর বেইজিং অলিম্পিক-কে কেন্দ্র করে চীনে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদ-সমর্থকসহ প্রায় চার হাজার মানুষ। এরই মধ্যে অ্যাথলেটসহ বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর চাওড় হয়েছে। তাতে শুরু আগেই আসর আয়োজন হুমকির মুখে পরেছে। বিশ্বের ২ হাজার ৮৭১ জন অ্যাথলেট বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিচ্ছেন এবারের আসরে। এদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৫৮১ জন এবং নারী অ্যাথলেট রয়েছেন ১ হাজার ২৯০ জন। তবে বাংলাদেশের কোনো অ্যাথলেট অংশ নিচ্ছেন না এতে। আসর চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ১৫টি ভিন্ন ডিসিপ্লিনে মোট ১০৯টি মেডেল ইভেন্ট থাকছে এই আসরে।

দেশকে করোনাশূন্য করতে বদ্ধপরিকর চীন, কড়াকড়ির সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। কোনো অঞ্চলে সংক্রমণ ধরা পড়লে বাসিন্দাদের তুলে নিয়ে গিয়ে দুই-তিন সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে বন্দি করা হচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় কোভিড-শূন্য অঞ্চলেও লকডাউন করে রাখা হচ্ছে। সংক্রমণ রয়েছে, এমন কোনো এলাকা থেকে বেইজিংয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এত কড়াকড়ির পরেও বেইজিংয়ে হানা দিলো-ওমিক্রন।

তার মধ্যেই এশিয়ান ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আয়োজন করতে যাচ্ছে চীন। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে অলিম্পিক আয়োজক কমিটি। তবে, সংক্রমণ এড়াতে অলিম্পিক আয়োজক কমিটি যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা যথেষ্ট বলে মনে করেন অলিম্পিক সংশ্লিষ্টরা।

মূলত বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক কাভার করতে আসা গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষনিকের প্রশান্তির কথা মাথায় রেখে অভিনব এক স্লিপ কেভিনের ব্যবস্থা করেছে আয়োজক কমিটি। যেখানে এক বেডে একজন গণমাধ্যমকর্মীর ঘুমানোর ব্যবস্থা আছে। যে এই বেডে ঘুমাবেন রিমোটের মাধ্যমে সে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সহজেই। থাকবে ম্যাসাজের ব্যবস্থাও। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মহাকাশের মত শূন্য গ্র্যাভিটিতে হবে পুরো প্রক্রিয়াটি। ফলে যারা এই কেভিনে প্রবেশ করবে তাদের সহজেই চলে আসবে ঘুম। কাজের ফাঁকে ক্ষণিকের জন্য হলেও মিলবে প্রশান্তি।

এছাড়া, বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমসে যারা অংশ নেবেন তারা পুরোটা সময় থাকবেন বায়োবাবলে। ফলে কোনো অ্যাথলিট কিংবা স্টাফ নিয়ম ভঙ্গ করে বায়োবাবল থেকে বের হতে পারবেন না। আর এ কারণে যারা অলিম্পিকে অংশ নিতে চীনে অবস্থান করবেন তারা উপভোগ করতে পারবেন না চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। 

এছাড়া লোকাল রেস্তোরাঁগুলোতে চীনের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদও কপালে জুটবে না তাদের। অবশ্য বেইজিং অলিম্পিক আয়োজক কমিটি বায়োবাবলে থাকা অ্যাথলিট ও স্টাফদের কথা চিন্তা করে নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সবেচেয়ে মজার বিষয়, আসরে আপ্যায়নের জন্য থাকছে রোবট। রুম সার্ভিস থেকে শুরু করে খাবার ডেলিভারি সবকিছুই করবে এই নতুন প্রযুক্তির রোবটগুলো। মূলত করোনা সংক্রমণ এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক দেশটি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩ হাজার অ্যাথলেট অংশ নেবে এবারের আসরে। এর সাথে থাকবে ২৫ হাজারেরও বেশি অতিথি। তাদের আপ্যায়নের দায়িত্বে থাকছে রোবট। শুধু তাই নয়, ভিডিওতে চোখে পড়েছে রোবট রাঁধুনিও।

তাছাড়া আসরটিতে কঠোরভাবে মানা হবে কোভিড প্রোটোকল। প্রতিদিন থাকবে পিসিআর টেস্ট। তবে সব ছাপিয়ে করোনাকালে রোবট বাহিনী ব্যবহার করে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক উঠে এসেছে আলোচনার শীর্ষে।

হাসিব মোহাম্মদ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন