আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

মায়ের কবর নদী গর্ভে বিলীন, বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ছেলে

ধরলার তীব্র ভাঙনে মায়ের কবর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন ছেলে বদিরুজ্জামান মিয়া (৫৮)। কৃষক বদিরুজ্জামান মিয়া স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে নিয়ে ডাল-ভাত খেয়ে ভালই চলছিল। কিন্তু গত এক মাস আগে ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে বাড়ী ভিটা ১৬ শতক জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ঠাই নেন আবাসনের মাঠে।  সেখানে দুইটি ছোট ঘর তোলে অতি কষ্টে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন।

এদিকে শেষ স্মৃতি মায়ের কবরটি মঙ্গলবার রাতে আগ্রসী ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বদিরুজ্জামান মিয়া বাগরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মা জোবেদা খাতুনের কবর হিসাবে শেষ স্মৃতিটুকুও  আগ্রাসী ধরলা নদী কেড়ে নেওয়ায় অনেকটা ভেঙে পড়েছেন এবং স্ত্রীসহ ৮ বছরের এক ছেলে ও ১৪ বছরের মেয়েসহ চরম দুর্দিন পাড় করছেন বদিরুজ্জামান মিয়া। বদিরুজ্জামান মিয়ার বাড়ী দেশের উত্তরের জেলার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর-গোরকমন্ডল গ্রামের মৃত শাহজাহান আলীর ছেলে।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, গত এক থেকে দেড় মাস আগে উপজেলার চরগোরকমন্ডল এলাকার ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে বদিরুজ্জামান মিয়ার বাড়ীর সামনে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে হাফ কিলোমিটার গ্রামীন সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সেই সাথে শতশত বিঘা ফসলি জমি ও ১৫ থেকে ২০ পরিবার নদী গর্ভে বিলীন হলেও কর্তৃপক্ষ ভাঙন রোধের জন্য ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েও ভাঙন ঠেকাতে পাড়ছে না। আগ্রসী ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন অব্যাহত থাকায় অনেকে বাড়ী ভিটাও রক্ষা করতে পারবে কি না সেই চরম দুচিন্তায় খাওয়া টুকুও ছেড়ে দিয়েছেন।

দিন মজুর বদিরুজ্জামান মিয়া (৫৮) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান,ধরলার ভাঙনে অনেক মানুষের বাড়ী-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। তারপরেও ওই সব মানুষসহ আমার মত কষ্টে এবং দুঃখ নেই। অনেকের জমিজমা থাকায় অন্য স্থানে নতুন করে বাড়ী-ঘর তৈরী করে থাকছেন। কিন্তু আমার কোন জমি-জমা না থাকায় আবাসনের মাঠে কোন রকমেই মানবেতর জীবন-যাপন করছি বাহে। বাড়ী-ভিটা নদী গর্ভে বিলীন হলেও আমার কোন কষ্ট হয়নি। গত রাতে আমার মায়ের শেষ স্মৃতি হিসাবে কবরটি ছিল সেই কবরটি কেড়ে নেন আগ্রাসী ধরলা নদী। আর কোন দিন মায়ের কবরে দোয়াসহ জেয়ারত করতে পারবো না। আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে বাহে ! এমন কষ্টে থাকার পরেও তার সহযোগীতায় কেউ এগিয়ে না আসায় চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। সেই সাথে ধরলার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের দাবী জানান।

স্থানীয় শাহালম মিয়া জানান, ধরলা নদী ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়ীর কাছেই এসেছে। নদী থেকে আমার বাড়ীর দুরত্ত মাত্র ৭ ফিট। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে কিছু দিনের মধ্যে আমার বাড়ী-ভিটাও গিলে খাবে আগ্রাসী ধরলা। তিনি আরও জানান, কর্তৃপক্ষ ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছে। কিন্তু ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। তাই তিনিসহ এলাকাবাসী  দ্রæত ভাঙন রোধ করার জন্য স্থায়ী নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় দাবী জানিয়েছেন।

চর-গোরকমন্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকার ধরলা নদীর তীব্র ভাঙনে ইতো মধ্যে ১৫ থেকে ২০ টি পরিবার ও হাফ কিলোমিটার সড়কসহ শতশত ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষকে জানানো পর ৬ হাজার জিওব্যাগ দিয়েছেন। কিন্তু ভাঙন রক্ষা করা যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, হুমকির মুখে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রসাসহ ওই এলাকার ৮০০ পরিবার।  ভাঙন রোধের জন্য কর্তৃপক্ষের সৃ-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ইসমত ত্বোহা জানান, চর-গোরকমন্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যেই ৬ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছে। আসলে ওই এলাকায় ভাঙন রোধ করার জন্য বড় প্রকল্প ছাড়া শুধুমাত্র জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করা সম্ভব না। ভাঙন রোধে স্থায়ী তীর রক্ষা বাঁধ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন