আর্কাইভ থেকে ক্যাম্পাস

জবি শিক্ষার্থী খাদিজার মুক্তির দাবিতে রাবিতে মানববন্ধন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মুক্তির দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার (৩০ আগস্ট) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ব্যানারে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দেশের চলমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যদি কথা না বলা যায় তবে স্বাধীনতার অর্থ কী? সাধারণ মানুষের মুখ বন্ধ করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পরবর্তীতে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। এটি একটি কালো আইন এবং এর মাধ্যমে জবি শিক্ষার্থী খাদিজা, লেখক মুশতাকসহ অনেকে ধরাশায়ী হয়েছে। এসময় তারা সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ অবিলম্বে খাদিজার মুক্তির দাবি জানান।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, বিগত দুটি নির্বাচন, দেশের চলমান উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে যদি আমরা কথা বলতে না পারি তবে স্বাধীনতার অর্থ কী? এগুলো নিয়ে আমরা যেটুকু বলছি তার চেয়ে আরও বেশি বলা দরকার। ক্ষমতাসীনদের নোংরামি নিয়ে কেউ যাতে কথা বলতে না পারে সেই লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। বর্তমানে আবার সেটি বাতিল করে নাম রাখা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। এ যেন নতুন বোতলে পুরাতন মদ। যে রাষ্ট্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত সেটি আর যাই হোক সভ্য রাষ্ট্র বলা যায় না। সরকারের দালালরা যেমন আছে সঙ্গত কারণে সমালোচনা করার লোকও থাকবে। দুটিই হজম করতে হবে। আমরা এই সমস্ত বিবর্তনমূলক আইনের সম্পূর্ণ বিনাশ চাই। সেইসাথে দীর্ঘ এক বছর ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজার ওপর যে নির্যাতন চলছে তার অবসান চাই।

আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, সাইবার নিরাপত্তা নামে যে এক কালো আইন আছে গত এক বছর যাবৎ সে কালো আইনের চরম অবিচারের শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজা। খাদিজার মুক্তির দাবিতেই আজ এখানে অবস্থান। এই আইনের শিকার হয়ে দুই বছর আগে মুসতাক নামক এক লেখককে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খাদিজা মেয়েটি এক বছর ধরে জেলে থেকে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। তবুও এদেশের বিচার বিভাগ, তদন্ত কমিটি নামক সন্ত্রাসী বাহিনীর টনক নড়েনি। সরকারের সমালোচনা করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সারাদেশে এই কালো আইন দিয়ে একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই নিকৃষ্ট সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল চাই। খাদিজাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্ত করে দিতে হবে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এই সরকার কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। তারা অত্যন্ত ভীরু ও দুর্বল। যারা সমালোচনা করছে তাদের রুখতে রাষ্ট্রের সব যন্ত্র ব্যবহার করছেন। রাষ্ট্র টিকে থাকবে কিন্তু ক্ষমতা টিকে থাকবে না। আজকে সরকার ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। কয়েকদিন আগে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বেড়াতে গেছে। তাদের ধরে আপনারা জেলখানায় পুরছেন। এটা হতে পারে না। আপনি যে অত্যন্ত দুর্বল সেটি আপনি নিজেই প্রমাণ করছেন। একজন খাদিজা রাষ্ট্রের জন্য এতো বড় হুমকি হতে পারে না। আমরা অবিলম্বে খাদিজার মুক্তির দাবি জানাই।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) আন্দোলন মঞ্চের সমন্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শৌভিক রেজা, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম সারোয়ার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি রায়হান আলী ও সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন