আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

'আল্লাহু আকবার' নিয়ে যা বললেন সেই ছাত্রী

সামাজিক মাধ্যমে গেলো মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি)  হিজাব পরা একটি মেয়ের ভিডিও ছড়িয়ে পরে। সেখানে দেখা যায় গেরুয়া ওড়না পরা একদল যুবকের বিরুদ্ধে মেয়েটি একা দাঁড়িয়ে 'আল্লাহু আকবার' বলে প্রতিবাদ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কর্ণাটকের মান্ডিয়া কলেজে। জানা গেছে মেয়েটির নাম মুসকান।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মুসকানের প্রতিবাদের সেই ঘটনা ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, মান্ডিয়া কলেজে এক দল গেরুয়া ওড়না পরা যুবকের স্লোগান ও চিৎকারের মুখে পরেন মুসকান, ভয় না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান তিনি।

ভিডিওতে দেখা যায় গেরুয়া ওড়না পরা যুবকরা যখন 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছিলেন, মুসকানও পাল্টা 'আল্লাহু আকবার' বলে স্লোগান দেন। এরপর তারা যখন মুসকানের পিছু পিছু আসছিল তখনও মুসকান 'আল্লাহু আকবার'... 'আল্লাহু আকবার' বলছিলেন। এক পর্যায়ে ওই কলেজের কর্মকর্তারা তাকে যুবকদের কাছ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।

এ বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে মুসকান বলেন, শুধু বোরকা পরে থাকার কারণে ঐ যুবকেরা তাকে কলেজে ঢুকতে দিতে চাচ্ছিলেন না । তারা জয় শ্রী রাম বলে চিৎকার করছিলেন, তাই তিনিও আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করেছিলেন। তিনি মোটেও উদ্বিগ্ন ছিলেন না। কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রভাষকরা তাকে সমর্থন করেছিলেন এবং যুবকদের থেকে রক্ষা করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ওই যুবক দলের মাত্র ১০ শতাংশ ছিল কলেজের ছাত্র এবং বাকিরা ছিল বহিরাগত। তারা কলেজের শিক্ষা পরিবেশকে নষ্ট করছে।

মুসকান বলেন, এটি গত সপ্তাহে শুরু হয়। তারা সব সময় বোরকা ও হিজাব পরতে অভ্যস্ত। অধ্যক্ষ তাদের বোরকা না পরতে পরামর্শ দিয়েছেন। তাই তারা ক্লাসে বোরকা খুলে হিজাব পরে থাকতেন। অধ্যক্ষ এ নিয়ে কখনও কিছু বলেননি। বহিরাগতরা এটি শুরু করেছে। হিজাব মুসলিম মেয়ে হওয়ার একটা অংশ মাত্র...। তাই তারা হিজাবের জন্য এ বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। 

বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী আরও জানান, তার হিন্দু বন্ধুরা তাকে সমর্থন করেছে। সবাই তার সাথে থাকায় মুসকান নিরাপদ বোধ করছেন।

জানুয়ারির শেষের দিকে উদুপি সরকারি মহিলা কলেজে যখন ছয় ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাস করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন, তখন থেকে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত।

স্কুল, কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করার পক্ষে সায় দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী ইন্দর সিংহ পারমার। নিজের রাজ্যেও এই নিয়ম চালু হতে পারে, দিয়েছেন এমন ইঙ্গিতও। পারমার বলেন, হিজাব স্কুল ইউনিফর্মের অঙ্গ নয়। তাই স্কুলে এটা পরা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। ঐতিহ্য মানতে হবে বাড়িতে, স্কুলে নয়। এটা শৃঙ্খলার প্রশ্ন। কড়া অভিন্ন পোশাক বিধি আনবেন তারা।

বিরোধী কংগ্রেস এ প্রসঙ্গে বিজেপি’র সমালোচনা করেছে। কংগ্রেস মুখপাত্র আব্বাস হাফিজ শিক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করেছেন সরকারের অগ্রাধিকার কি পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করে ভাল শিক্ষা দেয়ার উপযুক্ত কাঠামো তৈরি করা, না কি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতির বিষ স্কুলে, কলেজে ছড়িয়ে দেয়া। শিখদের পাগড়ি ও মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরা তো শতকের পর শতক ধরে চলে আসছে। হঠাৎ হিজাব নিয়ে এ আপত্তির নেপথ্যের উদ্দেশ্য কি জানতে চেয়েছেন কংগ্রেসের এ মুখপাত্র।

এদিকে কর্ণাটকের কলেজগুলোতে হিজাব পরা শিক্ষার্থী ও গেরুয়া ওড়না পরা যুবকদের মধ্যে বিক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই। ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, বুধবার (৯ফেব্রুয়ারি) কর্নাটক হাই কোর্টে এ সংক্রান্ত মামলার শুনানি হবে ।

অনন্যা চৈতী

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন