ভারত-কানাডা বিরোধ: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কী শঙ্কিত?
কানাডা প্রবাসী আলোচিত শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর গত জুন মাসে খুন হন। হত্যার তিন মাস পর হঠাৎ সোমবার কানাডা অভিযোগ করে,হরদীপকে হত্যার পেছনে ভারত সরকারের হাত রয়েছে। শুধু তাই নয়, অটোয়ায় নিযুক্ত ‘র’ এর কর্মকর্তা পবন কুমারের বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনে ট্রুডো প্রশাসন। জি-টুয়েন্টি সম্মেলনে সাইড লাইন বৈঠকে নরেন্দ্র মোদির সাথে বিষয়টি উত্থাপন করেন জাস্টিন ট্রুডো। তবে হত্যার পেছনে ভারত জড়িত নয় বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন নরেন্দ্র মোদি। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সোমবার অটোয়ায় নিযুক্ত ওই গোয়েন্দাপ্রধানকে বহিষ্কার করে কানাডা।
অটোয়ার এই আচমকা সিদ্ধান্তে হতবাক হয়ে যায় নয়াদিল্লি। পাল্টা পদক্ষেপ নিতে দেরি করেনি নরেন্দ্র মোদি প্রশা্সন। মঙ্গলবার কানাডার একজন সিনিয়র কূটনীতিককে ভারত ছেড়ে যেওয়ার নির্দেশ দেয় নয়াদিল্লি।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সরকারের দিকে সরাসরি অভিযোগের আঙ্গুল তোলার পরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এখন চাইছেন তার দেশের পাশে মিত্র দেশগুলো দাঁড়াক। কমনওয়েলথ ছাড়াও কানাডা নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন, অর্থাৎ নেটো এবং জি-৭-এর সদস্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জাস্টিন ট্রুডো চাইছেন, এই দুই গোষ্ঠী ভারতের বিরুদ্ধে আনা তাদের অভিযোগগুলি গুরুত্ব সহকারে দেখুক। আর তাই মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) পার্লামেন্ট হিলে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, ‘এটি একটি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা, যা অত্যন্ত গুরুতর।’ কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বলেন, “আমরা যা জানতে পেরেছি ঘটনাটি নিয়ে, সেটা প্রথমে আমাদের সহযোগী দেশগুলিকে জানাতে চেয়েছিলাম। আবার আমরা বিষয়টি ভারতের কাছেও গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করেছি।“
পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনৈতিক তৎপরতা তুঙ্গে
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডা ও ভারতের মধ্যে যে কূটনৈতিক বিরোধ শুরু হয়েছে, তা যাতে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলির ওপরে প্রভাব না ফেলে, তার জন্যই এখন প্রবল প্রচেষ্টা চালাবে পশ্চিমা বিশ্বের মন্ত্রী আর কর্মকর্তারা।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তিগুলি এই মুহূর্তে কখনই চাইবে না যে এমন একটা বিরোধ তৈরি হোক যেটি ভারতের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্ব রাজনীতির বৃহত্তর দাবার বোর্ডে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ। তারা যে শুধুই একটি ক্রমবর্ধমান শক্তি, তা নয় – ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। আবার চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সুরক্ষা প্রাচীর হিসেবেও ভারতকে দেখে পশ্চিমা দেশগুলি।
এটা ভারতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল যখন রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে নাম উল্লেখ না করেই একটি চূড়ান্ত বিবৃতিতে ঐকমত্যে পৌঁছিয়েছিল ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্র-দেশগুলি।
এই বিবৃতি নিয়ে বিতর্ক এড়ানোর মাধ্যমে তারা ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রক্ষা করার পথ বেছে নিয়েছিল, যদিও তাতে আবার কিয়েভের একটা অংশ ক্ষুব্ধ হয়। পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে আরেকটি আশঙ্কা আছে যদি বিভিন্ন দেশ কানাডা-ভারত বিরোধে কোনও একটা পক্ষ নেওয়া শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কী অবস্থান?
হরদীপ সিং হত্যার ঘটনায় আপাতত কানাডার মিত্ররা বিশ্বস্ত বলে জানা গেছে। তবে তারা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যার অভিযোগের বিষয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ আর ‘কানাডার যে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা সেটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’।
যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলির জন্য, যেখানে বৃহৎ শিখ সম্প্রদায় রয়েছে, সেখানে সবসময় এই জাতীয় কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিণতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের বিদেশ সচিব জেমস ক্লেভারলি বলছেন যে ব্রিটেন “কানাডার গভীর উদ্বেগগুলি খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনবে।“ তিনি বিবিসিকে জানান, কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মেলানি জলির সঙ্গে তাদের তোলা অভিযোগগুলি নিয়ে সোমবারেই কথা হয়েছে এবং “কানাডা যা বলছে, সেগুলিকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে” যুক্তরাজ্য।
তবে ব্রিটেন ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবে কী না, তা নিয়ে কিছু বলতে চান নি, তবে এটা বলেছেন যে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কানাডীয় তদন্ত শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে যুক্তরাজ্য। তাই, আপাতত পশ্চিমা দেশগুলি তদন্তের অগ্রগতির ওপরে নজর রাখবে। এখনই কানাডার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিচ্ছে না।