পর্যবেক্ষক না পাঠানো ইইউ’র ‘কপট সিদ্ধান্ত’
আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ। ঢাকা সফর করে যাওয়া প্রাক্-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের সুপারিশের ভিত্তিতে ইইউ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক ও কপট সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিক মহল।
চলতি বছর জুড়েই বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঢাকা সফরে আগ্রহের একটা বড় দিক ছিল বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন।অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এসব দেশ ও সংস্থার তাগিদও রয়েছে।বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা অতিমাত্রায় দেখা যাচ্ছে।চলতি বছরের জুলাই মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে গেছেন। তাদের পরামর্শে ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান (হাই রিপ্রেজেনটেটিভ) জোসেপ বোরেলের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ২০২৩-২৪ সালের জন্য ইইউর বরাদ্দ বাজেটের স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোসেপ বোরেল।
ইইউ’র চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করা হবে কি না, তা এই মুহূর্তে যথেষ্ট স্পষ্ট নয়।এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ইইউ বর্তমানে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকার ব্যাপারে অন্যান্য বিকল্প খতিয়ে দেখছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা সফরের সময়ই বলা হয়েছিল, প্রাক-নির্বাচনী দল দেশে ফিরে যে প্রতিবেদন দেবে, তার ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানাল ইইউ।
তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্তে সরকার বেশ হতবাক হয়েছে।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো.শাহরিয়ার আলম। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমককে বলেন,‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পর্যবেক্ষক আসা না আসাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কোনো প্রভাব পড়বে না। ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল না আসলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতায়ও কোনো প্রভাব পড়বে না। অতীতের নির্বাচনগুলো তাই বলে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের সাথে পর্যবেক্ষক পাঠানোকে সরলীকরণ করে কোনো সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ নেই।’
এসময় তিনি আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজস্ব চ্যালেঞ্জ আছে। ঢাকা সফরে তারা সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।বিএনপির সাথে আলোচনায় বসেছেন।এখন তারা (ইইউ)নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবেন কি, আসবেন না-এটি তাদের ব্যাপার।এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি পাঠানোর একটি বড় ক্রাইটেরিয়া বলে আমরা আগে থেকে জানি।’
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের অনেকেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান এ বিষয়ে বায়ান্ন টিভিকে বলেন ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত ‘অগণতান্ত্রিক ও কপট সিদ্ধান্ত’। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের নির্বাচন অনুষ্ঠান তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এ ব্যাপারে অন্য দেশের নাক গলানো শোভনীয় নয়। এটি ভিয়েনা কনভেনশনেরও পরিপন্থী।ইইউ প্রতিনিধি দল আসা-না আসায় নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এই বিশেষ দূত আরও বলেন,‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিনিধি দল পাঠাবে। জাপান, কোরিয়া, ভারতও তাদের পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে। তাই ইইউ প্রতিনিধি দল না আসলে সরকারের কিছু যায় আসবে না। এ ব্যাপারে সরকারকে নতজানু না হওয়ারও পরামর্শ দেন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগকারী এই কূটনীতিক।
একই অভিমত প্রকাশ করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বায়ান্ন টিভিকে বলেন,‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাদের প্রতিনিধি দল আসলে ভাল, না আসলেও কোনো ক্ষতি নেই।”
ইইউ প্রতিনিধি দল না আসলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা-জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমি মনে করি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত তাদের একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। এনিয়ে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না। তারা (ইইউ) আমাদের অতিথি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসলে তাদের ভালোভাবে আতিথিয়েতা করা হবে। না আসলে কোনো ক্ষতি নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তারা আসেনি। তাতে কী কোনো ক্ষতি হয়েছে? তাদের আসার জন্য সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না বলেও মনে করেন আবুল হাসান চৌধুরী।