ডেঙ্গুর বড় হুমকিতে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, ই্উরোপ ও আফ্রিকা: ডব্লিউএইচও
কোনোভাবেই থামছে না ডেঙ্গু জ্বরের চোখ রাঙানি। অদম্য গতিতে চলা এই জ্বর চলতি দশকে বড় ধরণের হুমকি হয়ে উঠতে পারে তিন মহাদেশের জন্য। মহাদেশ তিনটি হলো-আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকা। এমনই ভয়াবহ সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চল,দক্ষিণ ইউরোপ এবং আফ্রিকার নতুন অংশে বড় হুমকি হয়ে উঠবে ডেঙ্গু জ্বর। এই অঞ্চলের উষ্ণ তাপমাত্রা সংক্রমণ বহনকারী মশাদের বিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার বেশিরভাগ অঞ্চলে ডেঙ্গু দীর্ঘকাল ধরে একটি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুই অঞ্চলের দেশগুলোতে প্রতি বছরই প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গু জ্বরে সংক্রমণের হার এরইমধ্যে বিশ্বব্যাপী আট গুণ বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন,এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার পর ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়িয়েছে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তারা। বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের চলাচল এবং ক্রমবর্ধমান নগরায়ন ডেঙ্গুর জন্য দায়ী মশাদের বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জেরেমি ফারার জানান,আমাদের ডেঙ্গু সম্পর্কে আরও সক্রিয়ভাবে কথা বলা দরকার। কীভাবে অতিরিক্ত চাপ মোকাবেলা করবে সেই বিষয়ে আমাদের সত্যিই দেশগুলোকে প্রস্তুত করতে হবে।
ডব্লিউএইচও’র এই বিশেষজ্ঞ জানান,সংক্রমণটি সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং আফ্রিকার কিছু অংশে স্থানীয় হয়ে উঠতে পারে। এসব দেশের যেসব অঞ্চলে সীমিতভাবে স্থানীয় সংক্রমণ হয়েছে,সেসব অঞ্চলে সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা নতুন অঞ্চলগুলোকে মশার জন্য অতিথিপরায়ণ করে তুলছে। এই বিষয়টি অনেক দেশে হাসপাতাল ব্যবস্থার উপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করবে বলেও তিনি জানান।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ি,২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুতে ৪২ লাখ সংক্রমণের তথ্য রেকর্ড করা হয়েছিল। চলতি বছর সংক্রমণের মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সংস্থাটির জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেও ডেঙ্গু দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই ১০-১৫ জন লোক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।প্রতিদিনই দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বেডগুলো ডেঙ্গু রোগীতে পরিপূর্ণ। সরকারি হাসপাতালগুলোর ফ্লোরেও জায়গা হচ্ছে না রোগীদের। বলা হচ্ছে,বাংলাদেশ বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এরইমধ্যে এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে।