আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

জীবন সংগ্রামী এক প্রতিবন্ধী নারীর গল্প

একজন বাঙালীর ঘরে যখন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়, তখন বলা হয়ে থাকে ঘরে লক্ষ্মী এসেছে। সাধারণত এ কথা দিয়ে জন্মের পরই মেয়েটিকে প্রতিনিয়ত যেন দিতে হয় তার ভাগ্যের পরীক্ষা। শুধু তাই নয় তার বাবার কর্মজীবনে সফলতা থেকে শুরু করে ব্যর্থতা সব কিছু যেন নিয়ন্ত্রণ করে। সবার অজান্তেই মেয়েটি বড় হতে থাকে সে লক্ষ্মী না অপয়া। একজন নারী এ শব্দ দুটি দিয়ে সাপ লুডু খেলার মতো জীবন। শুরু হয় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন। তার পর সংসার জীবন। সহ্য করতে হয় ঘাত-প্রতিঘাত। চলে জীবন সংগ্রামের যুদ্ধ।

সেই জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী একজন নারীর নাম আমেনা বেগম (৩৫)। বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার সাবুতকালিবাড়ি গ্রামে। গ্রামটি সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের অর্ন্তগত। তার দুই পা অচল। স্বামী জিয়ারুল হক ১০বছর আগে মারা যান। অসহায় হয়ে পড়েন নিঃসন্তান আমেনা। কিন্তু তিনি ভিক্ষা বৃত্তি করেননি। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। চা-পানের দোকান করে মাসিক পাঁচ-ছয় হাজার টাকা আয় করছেন। 

ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ বুড়াউল গ্রামে আমেনার বাবা আছির উদ্দিনের বাড়ি। বাবার ১৫ শতক বসতভিটা ছিলো। তার চার মেয়ে। আমেনার মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরে সৎ মা আমেনাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। বোনদের মধ্যে সবার ছোট আমেনা। পনের বছর বয়সে সদর উপজেলার সাবুতকালিবাড়ি  গ্রামের  ছাত্তার মিয়ার ছেলে জিয়ারুল হকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামী ছিলেন দিনমজুর। কোনমত সংসার চলত। বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় প্যারালাইসেসে তার দুই পা পঙ্গু হয়ে যায়। হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করতেন। এভাবে পাঁচ বছর কেঁটে যায়। বিয়ের দশ বছর পর স্বামী মারা যায়।

সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার স্বামী। তার স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়িতে তার জায়গা হয়নি। তিনি আমেনা অসহায় হয়ে পড়েন। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও তিনি ভিক্ষা করেননি। এলাকাবাসীর সহায়তায় তিনি চা-পানের দোকান দেন। কালিরবাজারস্থ ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষে তার দোকান। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি বেঁচাকেনা করেন। দোকানেই খাওয়া দাওয়া ও রাত্রিযাপন করেন। প্রাকৃতিক কাজ সারেন উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের মসজিদের শৌচাগারে। চা-পানের দোকান করে মাসিক পাঁচ-ছয় হাজার টাকা আয় করছেন। 

আমেনা বেগম জানান, ইচ্ছা শক্তি থাকলে শারীরিক সমস্যা কোন বাঁধা নয়। তিনি সমাজের বোঁঝা হয়ে থাকতে চাননি। তাই আত্নীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী সহযোগিতা নিয়ে চা-পানের দোকান দেন। ভবিষ্যতে বড় পরিসরে দোকান করবেন পরিকল্পনা আছে বলে জানান তিনি। তবে মুলধনের অভাবে করতে পারছেন না।

দক্ষিণ বুড়াইল গ্রামের আব্দুর রহিম মিয়া জানান, আমেনা প্রতিবন্ধী হয়েও অন্যর কাছে হাত পাতায়নি। তিনি চেষ্টা করছেন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য। তার এই কাজ সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

কালিরবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, আমেনা একজন প্রতিবন্ধী দোকানী হওয়ায় এলাকার লোকজন অনেকেই তার দোকনে কেনাকাঁটা করে তাকে সহয়তা করছেন।

উদাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন জানান, আমেনা শারীরিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু তিনি অন্যর উপর নিভরর্শীল নন। তাকে নানাভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন