আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

হাদিসুরের মরদেহ দেশে আনতে একসঙ্গে কাজ করছে তিন মিশন

ইউক্রেনের ওলভিয়া সমুদ্রবন্দরে হামলার শিকার ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের নিহত থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহ দ্রুত দেশে ফেরাতে তিনটি মিশন একসঙ্গে কাজ করছে। বললেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (পূর্ব-ইউরোপ) শিকদার বদিউজ্জামান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বলেন, ‘হাদিসুর রহমানের মরদেহ এখনো ইউক্রেনে রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা তার মরদেহ দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো। এ বিষয়ে আমরা খুবই আন্তরিক। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে আমাদের তিনটি মিশন একসঙ্গে কাজ করছে।’

বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের ২৮ নাবিক রোমানিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসার পর বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

শিকদার বদিউজ্জামান বলেন, ‘হাদিসুরের মরদেহ কতদিনের মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব হবে, তা টাইম ফ্রেম বেধে বলা মুশকিল। কারণ আপনারা জানেন ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। সেখানে কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। তবে তার মরদেহ দেশে আনতে আমাদের আন্তরিকতা শতভাগ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ ইউক্রেনে যে যুদ্ধাবস্থা, সেই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের একটি সম্পদ বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকরা আটকে পড়েছিলেন। তাদেরকে পোল্যান্ড, সোমালিয়া ও অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাসসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি।’

হাদিসুরের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমরা তার মরদেহ দেশে ফেরানোর ব্যাপারে কাজ করছি, সেটা সম্পন্ন হোক। তারপর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য যা করণীয়, তা আমরা করবো।’

দেশে ফেরা নাবিকদের বিষয়ে শিকদার বদিউজ্জামান বলেন, ‘২৮ নাবিক পুরোপুরি সুস্থ আছেণ। তবে তারা ট্রমাটাইজড। তাদের মেডিকেল টেস্টসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।’

এর আগে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় ২৮ নাবিককে নিয়ে দেশের পথে উড়াল দেয় বিমানটি। রাতেই বিষয়টি  করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বিএমএমওএ সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন জানিয়েছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ট্রানজিট হয়ে বুধবার দুপুরে ২৮ নাবিককে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

এদিকে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনে রাখা বিধ্বস্ত জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহও দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ডেনিশ কোম্পানি ডেল্টা করপোরেশনের অধীনে ভাড়ায় চলছিল। মুম্বাই থেকে তুরস্ক হয়ে জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে নোঙর করে। ওলভিয়া থেকে সিমেন্ট ক্লে নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা ছিল জাহাজটির।

এরইমধ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হলে ২৯ জন ক্রু নিয়ে ওলভিয়া বন্দরে আটকাপড়ে জাহাজটি। পরবর্তী সময়ে গত ২ মার্চ রকেট হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। তবে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় অন্য হাদিসুরের মরদেহসহ জীবিত ২৮ জনকে ৩ মার্চ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়।

গত শনিবার (৫ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুরে ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দর সংলগ্ন বাংকার (শেল্টার হাউস) থেকে বেরিয়ে মালদোভার পথে যাত্রা করেন ওই ২৮ নাবিক। সবশেষ গত রোববার (৬ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে তারা ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে মালদোভা হয়ে দুপুরের পর রোমানিয়া পৌঁছান।


এসআই/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন