আর্কাইভ থেকে ধর্ম

কৈলাশ থেকে পিতৃগৃহে আসছেন দেবী দূর্গা

বর্ষা তার নূপুরের ছন্দ থামিয়ে হারিয়ে গেলে সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে আসে শরৎ , শিউলির গন্ধ ডানায় মেখে। এখন অপেক্ষা শারদ উৎসবের। শারদীয় দুর্গোৎসবে মাতবে গোটা দেশ। ভেতরে ভেতরে চলছে জোর প্রস্তুতি। আজ বাদে কাল শারদীয় বর্ণিল উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামীকাল শুক্রবার (২০ অক্টোবর) মহাষষ্ঠী। উৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা এদিন শুরু হবে। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ; দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া। সাধারণত শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচ দিন যথাক্রমে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত।

কাল শুভ বিল্বষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আপাতত দেবী দুর্গার আগমনের অপেক্ষা। কৈলাশ থেকে পিতৃগৃহে আসছেন উমা আনন্দময়ী।

দুর্গার আগমন, প্রস্থানের বাহন ও তার ফলাফল নিয়ে বাঙালি সমাজে বহু কথা প্রচলিত আছে। দেবী দুর্গা ও তাঁর পুত্র-কন্যার নিজস্ব বাহন থাকলেও আগমন ও প্রস্থানের বাহনের কথা আলাদা করে পঞ্জিকায় উল্লেখ করা থাকে।

হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারণ করে মর্ত্যলোকে সারাবছর কেমন যাবে। প্রতিবছর দুর্গার আগমন ও প্রস্থান সাধারণত একই বাহনে হয় না। যদি কোনো বছর তেমন হয়‚ তাহলে তা খুবই অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। এ বছর দুর্গার আসা ও যাওয়া, দুটোই হবে ঘোড়ায়। ফলে আগামী এক বছর অশুভ প্রভাব থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবকে বর্ণিল ও আনন্দঘন করে তুলতে বিপুল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ বছর সারাদেশে মোট পূজামণ্ডপের সংখ্যা হতে পারে ৩২ হাজার ৪০৭টি। গত বছর দুর্গাপূজায় মণ্ডপ ছিল ৩২ হাজার ১৬৮টি। সে অনুযায়ী নতুন ২৩৯টি পূজা মণ্ডপ উৎসবে যুক্ত হবে। ২০২১ সালে সারাদেশে মোট পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সারাদেশে প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরেই। এরই মাঝে ঢাকার অনেক এলাকায় মণ্ডপ নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে গেছে।

এবারও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মণ্ডপ নির্মাণ করা হবে বনানী মাঠে। খামারবাড়ি, কলাবাগানেও কাজ শেষ হয়ে গেছে। এসবের বাইরে জাতীয়ভাবে দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানেও চলছে নানা কাজকর্ম।

তবে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতিপর্বটা সবচেয়ে ভালো দেখা যায় পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজারে। সেখানে চলছে জমজমাট কেনাকাটা। বিভিন্ন ঘরে প্রতিমা তৈরির কাজ হচ্ছে। আগে থেকে অর্ডার নিয়ে মাটির প্রতিমা বানাচ্ছেন শিল্পীরা। পূজার আগে এসব প্রতিমা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে। প্রতিমা সাজাতে যত যা প্রয়োজন হয়, সবই পাওয়া যাচ্ছে দোকানগুলোতে। প্রতিমার শাড়ি গহনা ঘন কালো চুল- সবই বিক্রি হচ্ছে শাঁখারি বাজারে। পূজার সময় বিবাহিত নারীরা হাতে শাঁখা পরেন। সে কথা মাথায় রেখে কাজ করছেন শাঁখারিরা।

এর বাইরে ঢাকার মার্কেট ও শপিংমলে চলছে বহুবিদ কেনাকাটা। বিশেষ করে নতুন জামা জুতা শাড়ি পাঞ্জাবি কিনতে দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, দেবী দুর্গা যেমন ঘোড়ায় চড়ে আসছেন, ফিরেও যাবেন ঘোড়ায়। শাস্ত্র আবার বলছে, দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হওয়া শুভ নয়। ঘোড়ায় আগমন সাধারণত ছত্রভঙ্গের ইঙ্গিত দেয়। গমনও হবে ঘোড়ায় চড়ে। এর ফলে যুদ্ধ অশান্তি আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অস্থিরতা সৃষ্টির শঙ্কা আছে বলে বিশ্বাসীরা মনে করছেন।

টিআর/

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন