বাবার উপর অভিমান করেই বদলে ফেলেন নাম
ছবির তুলনায় বিতর্ক তার নামের পাশে বরাবরই বেশি। তবে ১০ বছর ধরে অভিনয়ে অনিয়মিত আছেন এ অভিনেত্রী। বলছিলাম বলিউডের অন্যতম অভিনেত্রী মল্লিকা শেরাওয়াতের কথা। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন।‘খোয়াইশ’, ‘মার্ডার’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার কল্যাণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন মল্লিকা শেরাওয়াত।
ভারতের হরিয়ানার হিসারে এক অভিযাত পরিবারে ১৯৭৬ সালের ২৪ অক্টোবর মল্লিকার জন্ম। রক্ষণশীল পরিবারে অনেক বিধিনিষেধের মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন তিনি। ছোট থেকেই পরিবারে প্রচলিত নিয়মনীতি মানতেন না তিনি। চেয়েছিলেন বিনোদন জগতেই নাম লেখাবেন। বাবা মুকেশ কুমার লাম্বা চাইতেন না মেয়ে অভিনয় করুক। এমনকি এই পেশাকে খুব ভালো চোখে দেখতেন না তিনি। তাঁর বাবার ধারণা ছিল, মেয়ে অভিনয়ে গিয়ে পরিবারের নাম ডোবাবে। সমাজে আর মুখ দেখানো যাবে না।
বাবার প্রতি অভিমান করে তাই নিজের নামটাই পাল্টে ফেলেন রিমা। হয়ে যান ‘মল্লিকা’। বাবা ভর্ৎসনা না করলে বলিউডে হয়তো রিমা লাম্বা নামেই পরিচিত হতেন তিনি। যদিও মুকেশ কুমার লাম্বার নামটি আজ মল্লিকার জন্যই পরিচিত! নাম পাল্টে পিতৃতান্ত্রিকতার গালেও একটা চপেটাঘাত করতে চেয়েছেন মল্লিকা। তাই নামের শেষে লাম্বার বদলে জুড়ে দিলেন মায়ের বংশের পদবি ‘শেরাওয়াত’। বলিউডে ঢোকার শুরুর দিকে মা সন্তোষ শেরাওয়াতই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
‘হিসস’ ছবিতে অনেকটা নগ্ন হয়ে ক্যামেরার সামনে শট দিয়েছেন মল্লিকা। ছবিতে ইচ্ছাধারি সাপের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। দিল্লি পাবলিক স্কুলের পরে মল্লিকার পড়াশোনা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরান্ডা হাউস কলেজে। দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক হন তিনি।
স্নাতক হওয়ার পরে তিনি বিমানসেবিকা হিসেবে এক এয়ারলাইনসে যোগ দেন। সেখানেই পরিচয় হয় পাইলট করণ সিং গিলের সঙ্গে। ২০০০-এ বিয়ে করেন মল্লিকা এবং করণ সিং গিল। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই বিবাহিত জীবনে দমবন্ধ মনে হতে থাকে মল্লিকার। বিবাহবিচ্ছেদের পরে মডেলিংয়ে নতুন কেরিয়ার শুরু করেন মল্লিকা। বিজ্ঞাপনে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানের সঙ্গে অভিনয় করে দ্রুত জনপ্রিয়তার প্রথম সারিতে চলে আসেন মল্লিকা। এবার তিনি ঠিক করেন বলিউডে অভিনয় করবেন।
কিন্তু প্রথমেই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ এল না। পরিবর্তে তিনি মিউজিক ভিডিও অভিনয় করলেন। ২০০২ সালে তাকে ছোট ভূমিকায় দেখা গেল ‘জিনা সির্ফ মেরে লিয়ে’ ছবিতে। পরের বছর সুযোগ পেলেন বি গ্রেডের ছবি ‘খোয়াইশ’-এ।
বলিউডের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন অভিনেত্রী ২০০৫ সালে জ্যাকি চ্যানের চিনা ভাষায় ছবি ‘দ্য মিথ’ দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ডেবিউ হয় মল্লিকার।
জ্যাকি চ্যানের বিপরীতে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ২০০৪-এ মুক্তি পেল ‘মার্ডার’। মহেশ ভাটের প্রযোজনায় অনুরাগ বসুর পরিচালনায় এই ছবির সুবাদে সেই জনপ্রিয়তা ও পরিচয় পেলেন মল্লিকা, যার জন্য তিনি পুরোপুরি বলিউডমুখী হয়েছিলেন।
‘মার্ডার’ ছবিতে এক সাহসী চরিত্রে অভিনয় করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছিলেন মল্লিকা। মার্ডার, ওয়েলকাম, ডাবল ধামাল, ডার্টি পলিটিকস, শাদি সে পহেলেসহ আরও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
‘খোয়াইশ’-এ মল্লিকার নায়ক ছিলেন হিমাংশু মালিক। এই ছবিতে মল্লিকার মোট ১৭টি চুম্বনদৃশ্য ছিল।
বেশ কিছুদিন কাজ থেকে দূরে থাকার পর এখন ওয়েবে নাম লেখালেন মল্লিকা। তারই প্রচারে এসে ক্যারিয়ারের শুরুর দিককার এই গল্প শোনালেন মল্লিকা। তিনি বলেন, ‘এটা পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আমার প্রতিবাদ। বাবা বলেছিল, “সিনেমাতে গেলে ও পরিবারের নাম ডোবাবে। আমি তোমাকে ত্যাগ করছি।”’
শেষবার ‘ডার্টি পলিটিক্স’ ছবিতে নগ্ন দৃশ্যে দেখা গিয়েছিল মল্লিকাকে নগ্ন অবস্থায় গায়ে ভারতের পতাকা জড়িয়ে বিধানসভার বাইরে একটি গাড়ির ওপর বসেছিলেন তিনি এই পোস্টারে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছিল।