ঢাবির বিশেষ সমাবর্তন বর্জনের ঘোষণা সাদা দলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান রবিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এ বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আসন্ন বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির বিষয়ে আমরা ভিন্নমত পোষণ করছি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশের একটি অগ্রণী ও শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এটি গণতন্ত্র চর্চার সূতিকাগার ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার লালন কেন্দ্র। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি, পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসক, এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশক্তির বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা আমরা সকলেই জানি। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এমন একজন প্রধানমন্ত্রীকে, যার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশে চরম কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সরকার চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে আবারো একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আগামী নির্বাচন বিষয়ে সরকারের হটকারী সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রশ্নে নতুন ভিসানীতি গ্রহণ এবং এর প্রয়োগ শুরু করায় বাংলাদেশ একটি দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবস্থানও বাংলাদেশের জন্য স্বস্তিকর নয়। এমতাবস্থায় বর্তমান সরকারের অগণতান্ত্রিক, স্বৈর ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা, আবারো একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের অপ্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এবং সরকারের পদত্যাগ ও একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক মানুষ এখন সর্বাত্মক আন্দোলন করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস এবং মানুষের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণকারী সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না। এর প্রতিবাদ হিসেবে সাদা দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আসন্ন বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আমরা আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকসমাজ আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়ে আসন্ন সমাবর্তন বর্জন করবেন।