আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন পাল তোলা নৌকা

নদীবেষ্টিত দেশের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর গ্রামবাংলার ঔতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন পাল তোলা নৌকা। যেখানে এক থেকে দেড় যুগে আগেও ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে সারি সারি নৌকা। সেখানে ছোট-বড় এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। নদীতে এক সময় পালতোলা নৌকা ছিল মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। যাতায়তের পাশাপাশি এ সব পাল তোলা নৌকায় করে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার কাজেও ব্যবহৃত হতো। সেই সাথে পাল তোলা নৌকা নদীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতো। যেন এক সৌন্দুর্যের দৃষ্টিনন্দন স্বর্গরাজ্য। তবে কালের পরিক্রমায় এসব পাল তোলা নৌকা এখন অতীত। এখন আর দেখা যায় না পাল সেই পাল তোলা বাদামি নৌকা।

এক দিকে জৌলুশ হারিয়ে নদ-নদীর অবস্থা এখন করুণ হচ্ছে। অন্য দিকে বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা। কিছু কিছু নদীতে পানি থাকায় হাতে গোনা দু-একটা সেই চিরচেনা নেই দৃষ্টিনন্দন পালতোলা নৌকা চোখে পড়লেও পানি কমার সাথে সাথে আর চোখে পড়বে না বলে জানিয়েছেন নৌকার মাঝি মজিবর রহমান।

সম্প্রতি ফুলবাড়ী উপজেলার সোনাইকাজী এলাকায় শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর উত্তর পাড়ে মজিবর রহমান গরু-ছাগল নিতে স্ত্রী ও স্বজনদের নিয়ে পালতোলা নৌকায় ধরলা নদী পাড়ি দিয়ে চরা লে যাচ্ছেন। মুলত তিনি বাড়ীর গৃহপালিত গরু-ছাগল নিয়ে যাওয়া করতেন এবং চরা লে গরু-ছাগলের খাবার ঘাঁস সংগ্রহ কাজে ব্যবহৃত হতো। পাশাপাশি নৌকার ধরলা সেতু দেখতে আসা কিছু দর্শনার্থী মাঝে মধ্যে সখ করে তার পালতোলা নৌকায় ধরলা নদীতে ভ্রমন করতে। নৌকা ভ্রমন শেষে দর্শনার্থীরা কেউ ১০০ টাকা আবার কেউ ২০০ টাকা করে দেন। প্রতিদিন পান না এসব দর্শনার্থী বলে জানান মাঝি মজিবর রহমান।

তিনি আরও জানান ৫-৬ বছর আগে যখন ধরলায় সেতু হয়নি। তখন ধরলা নদীতে বিভিন্ন স্থানে তিন-চারটি ছোট ছোট ঘাট ছিল। সে সময় ঘাটেও সারি সারি পালতোলা নৌকা বাঁধা থাকত। সে সময় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকা ঘাট দখল করে নিয়েছে। ফলে সময় বেশি লাগায় পালতোলা নৌকা ব্যবহার হতো কম। তারপরেও মানুষজন নৌকায় পাড়াপাড় হতো। তবে এখন গ্রামবাংলার দৃষ্টিনন্দন পাল তোলা নৌকা যেন শুধুই স্মৃতি।

ধরলা পাড়ের ইউপি সদস্য জমসেদ আলী স্মৃতিচারণ করে বললেন, আগে ধরলার পাড়ে পালতোলা নৌকায় মানুষ পাড়াপাড় করতেন। সেই সাথে ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে জেলেরা পালতোলা নৌকায় করে মাছ ধরতেন। আমরা সেই মাছ ধরা দৃশ্যাটা দেখে অনেক সুন্দর লাগতো। এখন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।

নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার বলেন, শৈশব থেকেই নদী আর নৌকা আমাদের বাঙালীর প্রতিটি মানুষের অস্তিত্বে মিশে ছিল। এক সময় সেই সব নৌকাই ছিল মানুষজনের যাতায়াত ও পরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিনন্দন পালতোলা নৌকায় নদীভ্রমণে তৃপ্ত হতো আমাদের মন। সারি সারি নৌকার ছন্দোবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল ওড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মানুষের মনপ্রাণ ভরে যেত। কিন্তু সেই চিরচেনা দৃশ্যটি এখন বিলুপ্তীর পথে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন