আর্কাইভ থেকে বিএনপি

পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ, সংসদে বিএনপির ওয়াকআউট

পৌরসভার নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল-২০২২ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলটি পাসের প্রতিবাদে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ ওয়াকআউট করেন। তবে কিছুক্ষণ পর তিনি সংসদ কক্ষে আবার ফিরে আসেন।

এর আগে হারুন বলেন, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। জনগণকে সেখানে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভিন্নমতের কেউ সেখানে না গেলে তাদের সরিয়ে দেয়া হবে, এই উদ্দেশেই এ আইন করা হচ্ছে। সরকারের কোন কোন নির্দেশ পালন করতে হবে, তা আইনে স্পষ্ট করার দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার কথা, সেখানে অনির্বাচিত কেউ বসতে পারবেন না। এটা সংবিধানের চেতনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত বিধায় এটি বাদ দেয়া হয়েছে। সেখানে কেন স্থানীয় সরকারে অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো হবে, এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পার্টির আরেক এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। নতুন পৌরসভা গঠনের পর প্রথমবার নির্বাচনের আগে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা যেতে পারে, সেটা জরুরি প্রয়োজনে। কিন্তু চলমান পৌরসভায় এটা করা ঠিক হবে না।

এর আগে, বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাব গুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।

সংশোধনীতে পল্লী এলাকাকে শহর ঘোষণার ক্ষেত্রে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্বের শর্ত পরিবর্তন করে তা বাড়ানোর বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

গত ২৩ জানুয়ারি বিলটি সংসদে তোলা হয়। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিদ্যমান আইনে বলা আছে পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। এর কম হলে হবে না। সংশোধন করে তা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হয়েছে।

বিলে পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে মেয়র ও কাউন্সিলদের অপসারণ সংক্রান্ত ধারনায় নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ধারা ‘ঝ’ যুক্ত করে বলা হয়েছে- মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার নিজ পদ হইতে অপসারণযোগ্য হবেন, ‘সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশ পালন করতে ব্যর্থ হন।’

বিদ্যমান আইনের ৪২(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোন শহর এলাকাকে পৌর এলাকা ঘোষণার পর পৌরসভার কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করিবে এবং পৌরসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত উক্ত প্রশাসক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন।’

বিলে এই ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে; বলা হয়েছে, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন পরিষদ গঠনের আগ পর্যন্ত কাজ চালানোর জন্য প্রশাসক নিয়োগ দিবে সরকার। সরকারি কোনও কর্মকর্তা বা সরকার উপযুক্ত মনে করে এমন কোনও ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দিবে।

বিলে পৌরসভার পরিষদ বাতিল সংক্রান্ত ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিক্রমে ১২ মাস বেতন বকেয়া থাকলে পরিষদ বাতিল হবে।

নতুন পৌরসভা গঠন হলে বা কোনও ইউনিয়নের অংশ বিশেষ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হলে বিলুপ্ত ইউনিয়ন বা বিলুপ্ত অংশে কর্মরতদের পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে বিলে।

বিলের উদ্দেশ ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত জীবন ও পর্যাপ্ত নাগরিক সেবার প্রত্যাশায় অধিক সংখ্যক মানুষ শহর মুখী হচ্ছে। একইসঙ্গে শহর এলাকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন নতুন অনেক পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর দেখা যায় যে, পৌরসভার নাগরিক সেবা প্রদান এবং নিজস্ব প্রশাসন পরিচালনার সক্ষমতা থাকে না। সুশাসন নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত সেবা প্রদানে শহরগুলোকে বাসযোগ্য করতে শহর গঠনে জনসংখ্যার ঘনত্বের মান পরিবর্তন প্রয়োজন।

বিদ্যমান আইনে পৌরসভাসমূহের মেয়াদ ৫ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদ প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত, পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পারে। অনেক সময় পৌরসভার মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন কারণে রিট মামলা বা অন্য কোনও মামলা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ অনির্ধারিত সময়ের জন্য পৌর প্রশাসন পরিচালনা করে। ফলে আইনের এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার ক্ষেত্রে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন।

বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্নজনের মতামত নিয়ে আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখার বিষয়টি যৌক্তিক। বিভিন্ন কারণে অনেক সময় নির্বাচন করা নিয়ে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়। অনেকে এর সুযোগ নিয়ে থাকেন।’

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন